মাটনবিলাসী ও অদ্বৈতবাদ
মুক্তিপ্রকাশ রায়
বেশিরভাগ বাঙালির মতোই খাসির মাংস আমার খাস পসন্দ। বাঙালির আর দোষ কী! তার বর্ণপরিচয়ই শুরু হয় "অ-এ অজ" দিয়ে। পাঁঠাও অজ, আর হজমের পক্ষেও ভালো বটে, তবে চর্বি কম থাকায় চর্বিতচর্বণ-জনিত সুখ ঠিক জমে না। আপনিও লক্ষ করে থাকবেন -- সুস্বাস্থ্যকে একটু হ্যাম্পার না করলে জিভকে ঠিকঠাক প্যাম্পার করা যায় না।
বেশিরভাগ বাঙালির মতোই আমি এবং আমার পরিবারবর্গ খাসি বা পাঁঠার মাংসকে 'মাটন' নামে অভিহিত করে থাকি। আরামবাগের কোনওকোনও বিয়েবাড়িতে মেনুকার্ডে 'মর্টন'-এর উল্লেখও দেখেছি। আপনি যদি ইংরেজি নিয়ে খুঁতখুঁতে হন, তাহলে মাটনের সঙ্গে ছাগলকে ভেড়া-নোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারেন; তবে তাতে ছাগলের সঙ্গে গাড়লসম্প্রদায়ের মেষামেষির ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারবেন বলে 'পেত্যয়' হয় না।
আরামবাগ এলাকায় আমরা মাঝেমধ্যে মাটনকে ফলের পর্যায়েও ফেলে থাকি। বিশেষ করে অনুষ্ঠানবাড়িতে পরিবেশক অনবরত জানতে চান -- মাটনের 'জুস' লাগবে কি না। এ কিন্তু 'সমোসকিতো' 'যূষ' নয়। ফ্রুটজুসেরই গোসতুতো ভাই। তবে সচেতনভাবে 'যূষ' বললে ব্যাপারটা মানহানির হয় না। আমি এইসব যুক্তি দিয়েই শহুরে আত্মীয়দের বাঁকা হাসি ট্যাকল করে থাকি।
এসব ক্ষেত্রে সেরা থিয়োরি হচ্ছে অদ্বৈতবাদ। স্রষ্টা নিজেই সৃষ্টিতে পরিণত হয়েছেন। আসলে সেই পরম 'এক' ভিন্ন কিছু নেই। মাটির ঘোড়া, মাটির হাতি, মাটির পাখি দেখতে আলাদা হলেও, সবই আসলে সেই মাটি। তাহলে আর মাটনের জুস হতে আপত্তি কী? ছাগলকে একপ্রকার কমলালেবু ভাবলেই ল্যাঠা চুকে যায়।
ছাগলই বলুন বা কমলালেবু, সবই স্রষ্টার রূপভেদ। রূপের বিভিন্নতা আসলে মায়াবদ্ধ জীবের দৃষ্টিবিভ্রম। বিজেপি, বজরং দল, আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ -- ইত্যাদি সংগঠনের সদস্যরা যদি বেদান্ত পড়ত, 'রামছাগলে' ভগবান ও ব্যা-জুবান যে একীভূত হয়েছেন, তাতে তাদের আপত্তির কিছু থাকত না। নিজে শাকাহারী বলে বাঙালিকেও 'ঘাসফুস' খাওয়ানোর জন্য এতটা উঠেপড়ে লাগত না। 'খাসি' যে আসলে 'ঘাসই' সেটা বুঝে গেলেই তো ...
বউকেও মাঝেমধ্যে ব্যাপারটা ভেবে দেখতে বলি আমি। একটু মুটিয়ে গেছি বলে সে আমার খ্যাঁটন থেকে মাটনকে বাদ দিতে চায়। আমি তাকে এই অদ্বৈতবাদে দীক্ষিত করার চেষ্টায় আছি। ভেবে দেখুন-না, ছাগল সারাজীবন খায় কী? ঘাসপাতাই তো? তাহলে তার গায়ে যে-মাংস আমরা দেখি, তা তো পরিবর্তিত ঘাস ছাড়া কিছুই নয়! খাসির মাংসকে মাংস দেখা এই মায়ার জগতের দৃষ্টিবিভ্রম নয় কি? আত্মজ্ঞানী এই ভুল কদাপি করবেন না।
বউ এইসব আলোচনা শুনলে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। খুব একটা কনভিন্সড হচ্ছে বলে মনে হয় না। কী আর করা যাবে, মায়াবদ্ধ জীব! তবে বরফ একদিন গলবেই, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আজই কলেজ-ফেরতা একটু মাটন কিনে নিয়ে গেলে কেমন হয়? মাটন থাকতে চিকেনের মতো জোলো জিনিস খায় কেউ?
বিশেষত এই 'অজ' পাড়াগাঁয়ে?
০৭/০৪/২০১৮
#মুক্তিপ্রকাশরায়
#মাটনবিলাসী
মুক্তিপ্রকাশ রায়
বেশিরভাগ বাঙালির মতোই খাসির মাংস আমার খাস পসন্দ। বাঙালির আর দোষ কী! তার বর্ণপরিচয়ই শুরু হয় "অ-এ অজ" দিয়ে। পাঁঠাও অজ, আর হজমের পক্ষেও ভালো বটে, তবে চর্বি কম থাকায় চর্বিতচর্বণ-জনিত সুখ ঠিক জমে না। আপনিও লক্ষ করে থাকবেন -- সুস্বাস্থ্যকে একটু হ্যাম্পার না করলে জিভকে ঠিকঠাক প্যাম্পার করা যায় না।
বেশিরভাগ বাঙালির মতোই আমি এবং আমার পরিবারবর্গ খাসি বা পাঁঠার মাংসকে 'মাটন' নামে অভিহিত করে থাকি। আরামবাগের কোনওকোনও বিয়েবাড়িতে মেনুকার্ডে 'মর্টন'-এর উল্লেখও দেখেছি। আপনি যদি ইংরেজি নিয়ে খুঁতখুঁতে হন, তাহলে মাটনের সঙ্গে ছাগলকে ভেড়া-নোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারেন; তবে তাতে ছাগলের সঙ্গে গাড়লসম্প্রদায়ের মেষামেষির ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারবেন বলে 'পেত্যয়' হয় না।
আরামবাগ এলাকায় আমরা মাঝেমধ্যে মাটনকে ফলের পর্যায়েও ফেলে থাকি। বিশেষ করে অনুষ্ঠানবাড়িতে পরিবেশক অনবরত জানতে চান -- মাটনের 'জুস' লাগবে কি না। এ কিন্তু 'সমোসকিতো' 'যূষ' নয়। ফ্রুটজুসেরই গোসতুতো ভাই। তবে সচেতনভাবে 'যূষ' বললে ব্যাপারটা মানহানির হয় না। আমি এইসব যুক্তি দিয়েই শহুরে আত্মীয়দের বাঁকা হাসি ট্যাকল করে থাকি।
এসব ক্ষেত্রে সেরা থিয়োরি হচ্ছে অদ্বৈতবাদ। স্রষ্টা নিজেই সৃষ্টিতে পরিণত হয়েছেন। আসলে সেই পরম 'এক' ভিন্ন কিছু নেই। মাটির ঘোড়া, মাটির হাতি, মাটির পাখি দেখতে আলাদা হলেও, সবই আসলে সেই মাটি। তাহলে আর মাটনের জুস হতে আপত্তি কী? ছাগলকে একপ্রকার কমলালেবু ভাবলেই ল্যাঠা চুকে যায়।
ছাগলই বলুন বা কমলালেবু, সবই স্রষ্টার রূপভেদ। রূপের বিভিন্নতা আসলে মায়াবদ্ধ জীবের দৃষ্টিবিভ্রম। বিজেপি, বজরং দল, আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ -- ইত্যাদি সংগঠনের সদস্যরা যদি বেদান্ত পড়ত, 'রামছাগলে' ভগবান ও ব্যা-জুবান যে একীভূত হয়েছেন, তাতে তাদের আপত্তির কিছু থাকত না। নিজে শাকাহারী বলে বাঙালিকেও 'ঘাসফুস' খাওয়ানোর জন্য এতটা উঠেপড়ে লাগত না। 'খাসি' যে আসলে 'ঘাসই' সেটা বুঝে গেলেই তো ...
বউকেও মাঝেমধ্যে ব্যাপারটা ভেবে দেখতে বলি আমি। একটু মুটিয়ে গেছি বলে সে আমার খ্যাঁটন থেকে মাটনকে বাদ দিতে চায়। আমি তাকে এই অদ্বৈতবাদে দীক্ষিত করার চেষ্টায় আছি। ভেবে দেখুন-না, ছাগল সারাজীবন খায় কী? ঘাসপাতাই তো? তাহলে তার গায়ে যে-মাংস আমরা দেখি, তা তো পরিবর্তিত ঘাস ছাড়া কিছুই নয়! খাসির মাংসকে মাংস দেখা এই মায়ার জগতের দৃষ্টিবিভ্রম নয় কি? আত্মজ্ঞানী এই ভুল কদাপি করবেন না।
বউ এইসব আলোচনা শুনলে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। খুব একটা কনভিন্সড হচ্ছে বলে মনে হয় না। কী আর করা যাবে, মায়াবদ্ধ জীব! তবে বরফ একদিন গলবেই, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
আজই কলেজ-ফেরতা একটু মাটন কিনে নিয়ে গেলে কেমন হয়? মাটন থাকতে চিকেনের মতো জোলো জিনিস খায় কেউ?
বিশেষত এই 'অজ' পাড়াগাঁয়ে?
০৭/০৪/২০১৮
#মুক্তিপ্রকাশরায়
#মাটনবিলাসী
No comments:
Post a Comment