Wednesday, January 31, 2018

জাস্ট স্বপ্ন

জাস্ট স্বপ্ন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মা-কে স্বপ্নে দেখলাম কাল।

যদিও তখনও হাসপাতালে, তবুও জানা গেল মায়ের অসুখ সেরে যাচ্ছে। আর কয়েকদিন হাসপাতালে থাকলেই এক্কেবারে সেরে যাবে। সৌম্য চেহারার এক ডাক্তারবাবু বললেন, শুধু কমলালেবুটা খাবেন না কিছুদিন, তাহলেই ...

এত সহজ? শুধু কমলালেবু না খেলেই হবে? এভাবেই সেরে যাবে ক‍্যানসার? থার্ড স্টেজ বলেছিলেন যে! কে যেন আবার বলেছিলেন -- মেটাস্ট‍্যাসিস হয়ে গেছে! সেই অনামুখো ডাক্তারের টিকিটিও ধারেকাছে দেখা গেল না।

তবে, ব্রেস্ট ক্যানসারের সঙ্গে কমলালেবুর সম্পর্ক কী তা আমিও ঠিক বুঝলাম না। তবে তাতে মায়ের তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মা তো আম ভালোবাসে। বরং আমার কিছুটা কমলালেবুর প্রতি  হ‍্যাংলামো আছে। লোকাল ট্রেনে কমলালেবু কিনে, একেকটা কোয়া মুখে ফেলে চুষতে চুষতে, আমি বহুবার যাত্রাপথের একাকিত্ব সহনীয় করে তুলেছি।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিল মা। অসুখ-অসুখ ভাবটা মুখ থেকে উধাও হয়েছে একদম। লম্বা চুল একমাথা। কেমো নেওয়ার পর আবার যখন চুল বেরিয়েছিল, মাকে কেমন যেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের মতো দেখাত। এখন আবার লম্বা চুলে সেই আগের মা। তবে মা দেখলাম কাঁদছে।
-কাঁদছ কেন মা? আমি জিজ্ঞেস করলাম -- সব তো ঠিক হয়ে গেল। আর চিন্তা কী? বাড়ি চলে যাব তো এবার। ওই কমলালেবুটুকু না খেলেই ...

মা বলল, কী কপাল দেখ অতটুকু মেয়ের!

পাশের বেডে একটা বাচ্চা মেয়ে শুয়ে ছিল। বছর পাঁচেক বয়স। কেমোথেরাপি মুছে নিয়েছে মাথার চুল। তার নাকি গলায় ক‍্যানসার। কিচ্ছু খেতে পারে না। নেতিয়ে পড়ে আছে বিছানার এক কোণে।

-আমি সেরে না উঠে যদি ওই মেয়েটা ভালো হয়ে যেত!-- স্থির দৃষ্টিতে মা তাকিয়ে ছিল মেয়েটার দিকে।
-তোমার যত অলক্ষুনে কথা! --এই বলে মায়ের মুখ চেপে ধরলাম আমি। আর তখনই ...
তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল।

বাড়ির পাশের মাঠে স্পোর্টস। প্রাইমারি স্কুলের বিচ্ছুগুলো জড়ো হয়ে গেছে সকাল থেকেই। মাইকে শুরু হয়েছে হাঁকডাক। একটা ছুটির দিনে মানুষ যে শান্তি করে একটু বেলা অবধি ঘুমোবে, তার জো আছে?

চায়ের কাপ হাতে দাঁড়ালাম গিয়ে বারান্দায়। সামনের মাঠে রঙের ছড়াছড়ি। টিফিন আর চেস্ট-নাম্বার বিলি হচ্ছে এখন। বিশেষ করে নজর গেল একটা বাচ্চা মেয়ের দিকে।

একমাথা কোঁকড়া কালো চুল।
গোটা মাঠ জুড়ে ছোটাছুটি করছে শীতের রোদ্দুরে।
তার হাতের মুঠোয় যেন গোটা একটা পৃথিবী।

একটা কমলালেবু।

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, January 23, 2018

টেনস-অন

টেনস-অন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

এখনকার সরকারি ইস্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ‍্যব‍্যবস্থার কিছুটা মিল আছে। দুটিরই সাধারণ ধর্ম -- সিগনিফায়ার আর সিগনিফায়েডের দ্বন্দ্ব। যেমন এখন ডাক্তারবাবু 'অজানা জ্বর' বললে সেটা 'ডেঙ্গি'র ইউফেমিজম বুঝতে হয়, তেমনই উচ্চমাধ‍্যমিকে ইংরেজিতে আশি পেলেও শিক্ষার্থী ম্লেচ্ছ ভাষায় সদ‍্য-সাক্ষর বই কিছু নয় বলেই ধরা ভালো (ব‍্যাপারটা অন‍্যান‍্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ‍্য হতে পারে)। অন্তত আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরই ওই দশা। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের গজদন্তমিনারে বসে যাঁরা পাঠ‍্যক্রম নিয়ে গবেষণা করেন (যাতে গ্রামেগ্রামে কেমব্রিজনিন্দিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা যায়), তাঁরা গ্রামের অধ‍্যাপকের দায়িত্বদুরূহতা কল্পনা করতে পারবেন না।
     আমার কলেজে উচ্চমাধ‍্যমিক প্রহসনে ইংরেজিতে আশি-পাওয়া ছাত্রছাত্রীর অধিকাংশই টেনস-টুকুও জানে না। টেমসের তো নামই শোনেনি। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে-- এ-হেন ছাত্রছাত্রীর ইংলিশ অনার্স পড়ার দরকার কী; বা ইস্কুলে যে কিছু শিখে উঠতে পারেনি, তার কলেজে ভরতি হওয়ার উপযোগিতা কোথায়। সরকার আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মতো উচ্চশিক্ষাকেও সর্বজনীন করে তুলতে উদ‍্যোগী; এ তারই ফল। তবে তা না করলে এতগুলো কলেজও তৈরি হত না, আর আমাদের মতো অভাগার অন্নসংস্থানও হত না। এতজনকে বি.এ. পাস করানোর পুণ‍্যেই যে নিজে শেষপর্যন্ত বিয়ে পাস করতে পেরেছি, তাতে সন্দেহ নেই।
     কৃতজ্ঞতাবশত দায়িত্বজ্ঞানের হদ্দমুদ্দ দেখিয়ে আমি মাঝেমাঝে ছানাদের টেনস, ট্রানস্লেশন ইত‍্যাদি অবসরমতো শেখাতে চেষ্টা করি; যাতে বিদেশি সাহিত‍্যসাগরে তাদের (ডগপ‍্যাডেলিং করে অন্তত) প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়। আগে তো শুদ্ধ ইংরেজিটা লিখতে শিখুক, তারপর নাহয় শেক্ষপিরের দরগায় সিন্নি চড়ানো যাবে -- ঈদৃশ ভাবনায় চালিত হয়ে আমি প্রত‍্যেক বছরই ছাত্রছাত্রীর জন‍্য টেনস-অন করে থাকি। এরকমই এক সমাজসেবার গপ্পো বলি।
     একটি মেয়ে, যে কিনা ইংরেজিতে উচ্চমাধ‍্যমিকের দানসত্রে অত‍্যুচ্চ নম্বর বাগিয়েছে, আমাকে টেনস শেখানোর ক্লাসে হরিণশিশুর সারল‍্যমেশানো বড়োবড়ো চোখ মেলে প্রশ্ন করল -- পার্সন ব‍্যাপারটা কী?
     এখন পার্সন না বুঝলে সিম্পল প্রেজেন্ট টেনসে থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারের ভার্বে যে s/es যোগ করতে হবে সেটি মাথায় ঢুকবে না। তাই অনেক কুস্তি করে ব‍্যাপারটা বোঝানো হল। মানে, যতটা সরল করে সম্ভব আর কী। পরীক্ষা করার জন‍্য একটা ট্রানস্লেশন দেওয়া গেল -- শিল্পা স্কুলে যায়।
- Shilpa go to school, মেয়েটির তুরন্ত জবাব।

যারপরনাই ফ্রাস্টু খেয়ে ফুঁসে ওঠা আটকানো গেল না, এই যে এত শেখালুম! তাও 'গো' বললি? এত 'গোঁ' তোর? 'Goes' হবে না?

মেয়েটিও ক্ষুব্ধ, আপনিই তো বললেন -- 'আমি/তুমি' এসব হলে s/es হবে না!

আমি/তুমি পাচ্ছিস কোথায় তুই? --আমি অবাক। বললুম তো 'শিল্পা স্কুলে যায়'!

মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, ও মা! শিল্পা তো আমারই নাম! ওটা তো আমিই! তাহলে ঠিকাছে তো স‍্যার?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

তেইশে জানুয়ারি ২০১৮

তেইশে জানুয়ারি ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

অ্যানিমিক, তাই রক্ত দেওয়াটা রিস্কি
RBC কম, শুধু জল-সোডা-হুইস্কি
বাধবে ঝামেলা তুমি ফিরে এলে
এলেবেলে যত আজ A level-এ
বাঙালি এখন বিস্কুট খেলে বলে, আহা ওটা 'বিস্কিট'

বুকে দম নেই , কদম বাড়াব কী করে?
কী ফুল ফোটাব? সারজল নেই শিকড়ে
স্ট‍্যাচু বানালেও কাকে হেগে দেবে
ফ‍্যাসিবাদী বলে কেউ দেগে দেবে
সব তরুণের স্বপ্ন -- কে দেবে ইন্টারনেট ফ্রি করে


Sunday, January 21, 2018

সরস্বতীপুজো: ২০১৮

সরস্বতীপুজো: ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আগে টিনটিন ছিল
আর আলাদিন ছিল
তারপরে মা তোমার
কাছে কিছু ঋণ ছিল

ডান্সে নাগিন ছিল
ব্লু ডেনিম জিনস ছিল
গরম খিচুড়ি ছিল
তাতে সয়‍্যাবিন ছিল

ভিড়ে চোখ চিনছিল
বুকে চিনচিন ছিল
হলুদ শাড়িরা পথে
টোপাকুল কিনছিল

আমাদেরও দিন ছিল
"ডোন্ট মেক আ সিন" ছিল
"আই লাভ য়‍্যু"-র পরে
"হোয়াট ডু য়‍্যু মিন?" ছিল

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, January 16, 2018

কিম্ভূত

কিম্ভূত
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেন তুই মোটা এত?
কেন তুই কঞ্চি?
কেন তোর ব্রেনে ঠাসা
বালি আর স্টোন-চিপ?
কেন তুই হাত-খোলা?
কেন তুই কঞ্জুস?
কী খেয়ে লম্বা হলি
কী টনিক? কোন জুস?
মার্কেটে এতকিছু
দুধ, সাবু, বার্লি
তাও তুই কোন মুখে
বেঁটে হতে পারলি!
কেন তুই মালাউন?
কেন তুই ম্লেচ্ছ?
সর্বদা তোর গায়ে
কেন ও-দলের ছোপ?
কেন তুই কালো এত?
শ্বেতি কেন চিবুকে?
আয় ব‍্যাটা কিম্ভূত
স্ট‍্যাম্প মেরে দি বুকে
পারফেক্ট দুনিয়ায়
এত কেন খুঁত তোর?
কে বাঁচাবে? কে জোগাবে
শো-কজের উত্তর?


#মুক্তিপ্রকাশরায়

Friday, January 12, 2018

আপৎকালীন

আপৎকালীন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

(ছন্দসূত্র মূলত: ড‍্যাংডা ড‍্যাঙাড‍্যাং ড‍্যাংডা ড‍্যাং)

কোনটা প্রতিবাদ, কোনটা তেল
ডান পা চাটে কি না বাম আঁতেল
কে মাওবাদী আর কে সম্পদ
কে বদ, তবু অতি বশংবদ্
সিনেমা হলে খাড়া দেশপ্রেম--
কে জানে ঢেকে রাখে কী প্রবলেম
কারা যে ঘুষ খায়, কে ননভেজ
বাতাসে কারা শোঁকে  বিফ, সসেজ
কাকে যে ভয় করি -- পাক না চিন
প্রশ্ন             ফুটে ওঠে
প্রশ্ন             উথলোয়
ঢাকনা দিন, দাদা, ঢাকনা দিন

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Monday, January 8, 2018

আশিকি ২০১৮

আশিকি ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আজও ওড়ে চিল, পাথুরে পাঁচিল, হিংসুটে চোখ পাহারায়
তাও সবখানে প্রেমিকেরা জানে, জব তুম আও বাহার আয়ে
একে টাকা নেই, মামা-কাকা নেই, তায় দুশমন জমানা
তোরও বহু গুণ, অ্যাটিলা দ‍্য হুন, শুধু রাগ আছে, ক্ষমা নাই
টেলিফোন নেই; পড়ি, মন নেই; ধরেবেঁধে দিবি ফাঁসি কি?
লাভ কী বা তোর ছুড়ে পাত্থর, বদনাম করে আশিকি-র?
কার সাথে গেলি, ঝুমকা গিরালি কোন বরেলির বাজারে
সব কিছু ক্ষমা করে প্রিয়তমা আমি জিসাস অব নাজারেথ
চিকনি চামেলি, ফ্লার্ট করে গেলি,  বদনাম হল মুন্না
কাঁটা পেতে শুই, ভেবে বল তুই, এও কি আসলে খুন না?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

ভাগ‍্যিস

ভাগ‍্যিস
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভাগ‍্যিস গায়ে লোম কিছু বেশি
বউ বলে, যেন গোরিলা
নইলে এ-শীতে গা ঘামাতে চাই
কুস্তি, জগিং, দড়িলাফ
অত হুজ্জতি ভালো লাগে কারও
সুস্থ শরীরে খামখা?
বাবা কিনে দেয় হনুমান টুপি
বন্ধুরা বলে, রাম খা
বজরং টুপি দেখে শালি হাসে
রাম দেখে কাড়ে রা বোনও
চানের সময় কেঁপে উঠি যেন
বালতিতে মহাপ্লাবন ও
ঘায়ের ওপর প্রলেপের মতো
লেপ এসেছিল বিয়েতে
রাতে লেপ কেড়ে লেপের মালিক
যেন ছুরি মারে ইয়ে-তে
পণপ্রথা জানি অভিশাপ, তাই
মৃদু হেসে বলি, পাগলি!
এত রাত্তিরে পোষাবে এ-দুটো
স্নো-বল সমেত জাগলিং?
নই আমি কোনও মেরুভল্লুক,
সিলমাছও নই, স‍্যান্টাও
মারবিই যদি, তিলে তিলে কেন
অন করে দে-না ফ‍্যানটাও
এ-শীতও আমার বশ মেনে গেছে
সাপ যেরকম সাপুড়ের
ভাগ‍্যিস গায়ে লোম কিছু বেশি
যেমন অনিল কাপুরের

#মুক্তিপ্রকাশরায়