Friday, December 29, 2017

নতুন বছরের ছড়া: ২০১৮

নতুন বছরের ছড়া: ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভোর হোক, আলো হোক
চুলো হোক, চালও হোক
সাঁওতাল বেঁচে থাক
পাশে জিন্দালও হোক

সতেরোর ভুলগুলো
আঠারোয় ঠিক হোক
হাতে হাত ঠেকে গেলে
পুরোনো ম‍্যাজিক হোক

প্রেম হোক, ইয়ে হোক
চাকুরের ডিএ হোক
আইবুড়ো কবিদের
আঠারোয় বিয়ে হোক

মোড়ে মোড়ে চপও হোক
ঘরে ঘরে জবও হোক
যাদবপুরের মোড়ে
'হোক কলরব'ও হোক

ভয়টয় দূর হোক
যার শুধু পাউরুটি
       তার ঝোলাগুড় হোক
বিভেদ-কুকুর এলে
তেমনই মুগুর হোক

পৃথিবীর ভালো হোক
কম জঞ্জালও হোক
      ফেয়ার-অ্যান্ড লাভলি-কে
      না কিনুক পাবলিকে
কালো মানুষেরা মাথা
উঁচু করে কালো হোক

#মুক্তিপ্রকাশরায়


কবির মৃত‍্যু

কবির মৃত‍্যু
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেউ খালি পা-য়, কেউ তালি পায়
কেউ কাল-ই পায় বুঝি জ্ঞানপীঠ
মোছা কারও গদি, নয় স্ববিরোধী
মমতা বা মোদি কারও দেন পিঠ--
চাপড়িয়ে তাই বাড়ে ইয়েটাই
শুধু ডিএটাই নাকি লাট খায়
কেউ বিপ্লবী, কারও deep love-ই
তাঁকে cheap কবি হতে আটকায়
কেউ লোভী তাও, ছাপা ছবিটাও--
চায়, কবিতাও উপলক্ষ‍্য
পেলে এডিটার, তেল রেডি তার
পোষা টেডিটার মতো সখ‍্য
পাতা ঝরে যাক, শ্রোতা সরে যাক
পাশে মরে যাক কেউ স্টেজেতে
সে তো হেরো, ছাড়, তাকে করে বার
কারা হারে আর দেখি কে জেতে

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Sunday, December 24, 2017

বড়দিন ২০১৭

বড়দিন ২০১৭
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কিছু লেগে থাকে কাঁটার মুকুটে
কিছু লেগে থাকে পেরেকে
কেউ বলে, কিছু স্নো-ফলে রাখিস
ফাটা ঠোঁটে কিছু দে রেখে
রাজপথে কিছু শুকিয়েও যায়
কিছুটা শুকোয় বর্ডারে
ইতিহাস কিছু মুছেটুছে দেয়
রাজা বা রানির অর্ডারে
মোজার ভিতরে উপহার জমে
পূজাবেদীমূলে ভক্ত
যিশুর জন‍্যে কেঁদে ওঠে শিশু
বলে, ও মা! এ যে রক্ত!

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Saturday, December 23, 2017

দুলাল বিশ্বাস: zরা হটকে

দুলাল বিশ্বাস: zরা হটকে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মাঝেমাঝে এক-একজনের অবয়ব ছেয়ে ফ‍্যালে গোটা একটা দিন। সেদিন তার কথাই ভেসে বেড়ায় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে। দেবলের বাবার কথা আজ কিছুতেই মন থেকে সরানো যাচ্ছে না। আজ তাঁর শ্রাদ্ধ।
     দেবলের বাবা দুলাল বিশ্বাস। শেষদিকটায় ভুগছিলেন খুব। ডায়ালিসিস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তবে দেবলদের লড়াইটা হঠাৎ এইভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা ভাবেনি কেউ। দুর্বল শরীরে নিজে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন কাকু। মাথায় আঘাত ... তাতেই।
     চিরকাল আমার অদ্ভুত মানুষ পছন্দ। যাঁরা "zরা হটকে"। সাধারণ লোকের জীবন, সমারসেট মম যেমন বলেছিলেন --- ট্রামগাড়ির চলন। বাঁধা পথের বাইরে গেলে তাদের নার্ভাস ডায়েরিয়া হয়। অদ্ভুত মানুষেরা এইজন‍্যই চোখে পড়ে। মনে থেকে যায়। আলাদা হয়ে উঠতে অসম্ভব মনের জোরও থাকতে হয় বোধহয়। কাকুর কথা মনে পড়ছে গাড়িতে যেতে যেতে। ব‍্যাবসায় রোজগার যেমন করেছেন, খরচও করেছেন হাত খুলে। খরচটা মূলত খাওয়াদাওয়ায়। গর্ব করে বলতেন, বুzলা মুক্তি, দুলাল বিশ্বাস যদি না খেয়ে টাকা zমাইত, তাইলে সোনার ইট দিয়া বাড়ি বানাইত।
     খুব একটা বাড়িয়ে বলা নয়। প্রথম যেদিন খবর না দিয়ে উটকো অতিথির মতো দেবলের সঙ্গে ওদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলাম, সেদিন নিতান্ত 'সাধারণ রান্না' বলতে তিনরকম মাছ আর দেশি মুরগির মাংস! তখন হস্টেলের বুভুক্ষু আমরা। বনগাঁ লোকালের গণলাঞ্ছনার গ্লানি চিতলের কাছে নিতান্ত 'পেটি' হয়ে গেল‌।
     কাকু মছলন্দপুরের বাজারে এলে লোকজন আর ভালো মাছ কিনতে পেত না। কেউ হয়তো পাঁচশো টাকার মাছকে দরাদরি করে সাড়ে চারশোয় প্রায় ম‍্যানেজ করে এনেছে, এমন সময় মার্কেটে দুলাল বিশ্বাসের আবির্ভাব। আড়চোখে তাঁকে দেখতে পেয়েই মাছের ওপর গামছা চাপা দিয়ে সরিয়ে ফেলত মাছওয়ালা-- আপনি ছেড়ে দ‍্যান, এ-মাছ বিককিরি হয়ে গেছে।
সে জানে মাছ ভালো হলে দুলাল বিশ্বাস দরাদরি করে না। কাজেই ...
     মাছওয়ালা অবশ‍্য জানত -- দুলাল বিশ্বাস কঠিন জিনিস। বাজার করায় পিএইচডি। আলতুফালতু মাল তাঁকে গছানো অসম্ভব। মাছের পেট টিপে তার ইউএসজি করে ফেলার ক্ষমতা ছিল তাঁর। এছাড়া কোন ঋতুতে কোন মাছ খেতে নেই, বেগুনের টেস্ট কোন সময়ে বাড়ে, ফুলকপি হাইব্রিড কি না -- তা কী দেখে বোঝা সম্ভব, এ-সব 'গুরুত্বপূর্ণ' বিষয়ে দুলাল বিশ্বাসের মতামত খনা-র বচনের মতোই শিরোধার্য।
     একবার লিচু পাঠানো হবে দেবলের পিসিমার বাড়িতে। এক-আধকিলো নয়, এক রিকশ-ভ‍্যান ভরা লিচু। লিচু ছোটো বলে কাকুর না-পসন্দ্। এত ছোটো লিচু কি বোনের বাড়ি পাঠানো যায়? মান যাবে না? ছেলেমেয়েদের বললেন, এগুলো তোরাই খেয়ে ফ‍্যাল।
বাড়ির ছেলেমেয়ে, সঙ্গে কাজের লোকজন, এক রিকশ-ভ‍্যান লিচু সাবড়ে দিলে! পিসিমার বাড়ির জন‍্যে আবার 'বড়ো' লিচুর অর্ডার হল।
     দেবল বোধহয় ওর গোঁয়ার্তুমি কাকুর থেকেই বংশগতির অনিবার্যতায় পেয়েছিল। দেবলই প্রথম আমায় দেখিয়েছিল -- নিজের খারাপ-লাগা কারও মুখের ওপর বলে দেওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে কাকুর একটা গল্প। একবার, সম্ভবত বনগাঁ লোকালেই, এক কমলালেবুওয়ালা কাকুর সঙ্গে তর্ক জুড়েছিল -- লেবু খেয়ে দেখুন, মিষ্টি না হলে জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেবেন। তো, কাকু নিলেন একখানা লেবু, ধীরেসুস্থে খোসা ছাড়ালেন, মুখে দিলেন এককোয়া, তারপর বাকি লেবুটা ছুড়ে ফেলে দিলেন ট্রেনের জানলা দিয়ে।
     কেন জানি না, কাকু খুব ভালোবেসে ফেলেছিলেন আমাকে। যতবার মছলন্দপুরে গেছি, বা পরে কেষ্টপুরে, উনি আমাকে খাওয়াবেন বলে বাজার করতে ব‍্যস্ত হয়ে পড়তেন। আমার ঠাকুমা ছিলেন পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু। বাঙাল-রক্ত আমার শরীরে যেটুকু আছে, তা সম্ভবত জিব আর পাকস্থলীতেই। ফলে বাঙাল রান্নার প্রতি আমার বিশেষ পক্ষপাত। আর কাকিমা, অর্থাৎ দেবলের মা, বাঙাল পদাবলির ভানুসিংহী। তাই দেবলের বাড়ি গেলেই আমার নোলা সকসক করত। মুক্তির জন‍্য 'কসুর লতি' জোগাড় না করতে পারলে কাকু ভাবতেন আতিথেয়তায় নিতান্ত ত্রুটি রয়ে গেল।
     একবার একটা পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় গাড়িতে উঠে পড়েছি; কাকু অন‍্যান‍্য অতিথিদের নিয়ে ব‍্যস্ত দেখে তাঁকে আর বিরক্ত না করে, কাকিমা আর দেবলের থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি; হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে কাকু এসে হাত রাখলেন আমার জানলায় -- চলে যাচ্ছ? মুক্তি, তুমি আমায় একবার বলে গেলা না?
ভেজা গলায় কথাটা যেভাবে বললেন কাকু, তার তীব্রতার কোনও তুলনা হয় না। লজ্জায় আমি তখন প্রায় সিটের নীচে ঢুকে পড়তে চাইছি, নেহাত ভুঁড়ির জন‍্যে পেরে উঠছি না।
     কাকুর চলে যাওয়ার খবর হঠাৎ পেয়ে আমারও যে একটু অভিমান হয়নি তা নয়। কোমায় চলে গেছেন শুনে দেখতে গিয়েছিলুম। সে-দেখা দুঃস্বপ্নের মতো। কাকু চোখ মেলতে পারেননি।

একবার বলে গেলেন না, কাকু?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, December 19, 2017

বিপথগামী

বিপথগামী
মুক্তিপ্রকাশ রায়

যারা খোঁজে তারা পায়, আমাদের হারানো স্বভাব
সংসার ডুবে গেলে, কবিতার মুঠিমাত্র লাভ
পথিক, তুমি কি পথ হারিয়েছ? ডেকে বলে কারা
আলেয়ার মতো শব্দ বিপথের দেখায় ইশারা
মহাকাল জানে, তাই আমরাও মেনেছি নীরবে
ব‍্যাধের তিরের ফলা একদিন মহাকাব‍্য হবে
হিসেবে চলতে বল, তবু রয়ে যায় ভুলচুক
এভাবেই কবিদের ঔদ্ধত‍্য বজায় থাকুক

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Monday, December 18, 2017

নির্বাচন

নির্বাচন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

যদি তুই হায়নাকে ভয় পাস
তবে তোর দিল মাঙে নেকড়ে
খুনিকে না দিলে প্রেমপত্র
ডাকাতের ঠিকানায় লেখ রে
তোর যদি মনেমনে ছিল এই
কেউটেকে দুধকলা না দিবি
গোখরোকুমার এলে, বল সই--
কোথা বসাইবি, কী বা রাঁধিবি?
পায়খানা যার লাগে ঘেন্না
সে নয় বিষ্ঠা মাখ দু-হাতে
বাঘ দেখে ভয় পেলে খুঁজে দেখ
আর কী জন্তু আছে গুহাতে
যে যার ইচ্ছেমতো বেছে নিক
এটা গণতান্ত্রিক অধিকার
বাছাবাছি শেষ হলে, বাছাধন!
কী লাভ প্রশ্ন তুলে -- গদি কার?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Wednesday, December 13, 2017

শীত ২০১৭

শীত ২০১৭
মুক্তিপ্রকাশ রায়

এখন বোধহয় শ্বাস নেওয়ারও অফ সিজন
বন্ধ নাকে নো এন্ট্রি টু অক্সিজেন
খাবারে নেই, ফুলবাগানেও খুশবু শেষ
সর্দি জমে হালত খারাপ ফুসফুসে
সেদিন এমন কপাল খারাপ, পিকনিকে
জ‍্যাকেটটাতে লাগিয়ে দিল শিকনি কে
সারাবছর চান করা যায় প্রাণ খুলে
এখন দ‍্যাখো, বালতি-ভরা ছাঙ্গু লেক
কাশির ঠেলায় ঘুম গেছে হায় যমপুরী
বউ বলে ব‍্যাং, শালির মতে ওম পুরী--
এমন গলার হাল, অপমান চূড়ান্ত
তাও যদি কেউ একটু নলেন গুড় আনত
সহ‍্য হত এমন বাঁকা কথার তোড়
শীতের জন‍্য মাসদেড়েকই যথার্থ
মেঘের পাশে রুপোর রেখা বুকফেয়ার
নইলে কজন এই জ্বালাতন ভুগবে আর?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Monday, December 11, 2017

ট্রেনে যেতে যেতে

ট্রেনে যেতে যেতে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

দিয়াড়া ছেড়ে গেল, এল নসিবপুর
কপালে ছিল বলে তুমি গিয়েছ দূর
দূর কী দুর্বহ কিছুটা পাই টের
দামও যে বেড়ে চলে নিপ বা পাঁইটের
কী করে বিরহকে ডুবিয়ে করি খুন
বন্ধু বলে, দিল যো চাহে উও লিখুন
তাই আপনমনে দেওয়ালে ঘুঁটে দিই
পুরোনো পাপীদের ঘা-গুলো খুঁটে দিই
একে কি ছড়া বলে? কে জানে, যো ভি হো
পেরেমে ল‍্যাং খেয়ে বাঙালি কবি হোক

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Sunday, December 10, 2017

বৃষ্টিদিনের কাপলেট

বৃষ্টিদিনের কাপলেট
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মাথার ওপর মেঘ জমেছে ক‍্যান্ডি ফ্লস
কাজ-পালানোর নাম রেখেছি ধ‍্যান-দিবস

#মুক্তিপ্রকাশরায়

অপবাদ

অপবাদ
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কী করে জানবে কৃষ্ণচূড়াটি একদিন অণুগল্পের
মতো পথচলা শেষ হয়ে যাবে, আসবে না চেনা কল ফের
কথা রয়ে যায় সান্ধ‍্য হাওয়ায়, কিছু বা মেলার ধুলোতে
কবিতার খাতা ছুঁয়ে দেখলি না, কত জন্মের ঝুল ওতে
সম্মুখে গিরি দুর্গম, আর পারাবার অতি দুস্তর
বোকা ছেলেটার আজও দায়ভার কাঁটার মুকুট, ক্রুশ তোর
দিন আনি আর দিন খাই শুধু, মাধুকরী,  সরকারি না
তুই ফিরে এলে আমি কি এখনও প‍্যাশনেট চুমু পারি না?



#মুক্তিপ্রকাশরায়

বহুরূপীর জন‍্য কাপলেট

কেউ জানে না, কেউ বোঝে না, কখন কী যে রূপ ধর
তুমিই আমার বৈধ জানম, তুমিই আমার গুপ্তরোগ

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Friday, December 8, 2017

রুচিবদল

রুচিবদল
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেউ বোঝে না অর্থনীতি ডিজিটালিন্ডিয়ায়
বোঝেন শুধু অরুণবাবু জেটলি
স্বপ্নে দেখি আগুন জ্বেলে বসিয়ে কারা দিচ্ছে
গরম চায়ের ব‍্যক্তিগত কেটলি
রাজস্থানের ছাই মিশে যায় ধুলাগড়ের ধুলোয়
আল্লা নীরব, নীরব রঘুনন্দন
স্বচ্ছ ভারত, স্বচ্ছ ভারত, সাফ করে দাও আরও
গায়ের থেকে মানুষ-মানুষ গন্ধ
আমরা বোড়ে, বুঝব কী আর উন্নয়নের মানে
বুঝুক যারা খেলতে পারে দাবা
দেশের জন‍্য বিফ ছেড়ে আজ ধরব কি না ভাবছি
মানুষ-পোড়া -- পলিটিক‍্যাল কাবাব

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, December 5, 2017

আত্মরক্ষা

আত্মরক্ষা
মুক্তিপ্রকাশ রায়

দোষীর বিচারে যাব, সাজাও আমাকে
বিবেকের মতো, যেন সাক্ষাৎ শমন
অপরাধী দুঃস্বপ্নে ভাই বলে ডাকে
                                 
খড়্গাঘাতে লেখা হবে সন্দেহাতীত অস্বীকার

ভয় হয়, তাই এই ভয় দেখাবার আয়োজন
নিজেকে রশিতে বাঁধি সভ‍্যতার দৃঢ় মাস্তুলে
সে তত নিষ্পাপ যার হাতে যত নিষ্ঠুর বিচার
গলানো মোমের মতো কর্ণকুহরে ঢালি
জনতার অবোধ গর্জন

প্রিয় , আর দেরি নয়, তর্জনী উঠেছে দিকেদিকে
আমার দায়ের নীচে রাখো তুমি ছাগশিশুটিকে

Monday, November 27, 2017

সুইসাইড নোট

সুইসাইড নোট
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মৃত‍্যু এক মিথ‍্যে কথা ... জীবনের মতো

কবে কোন নক্ষত্র গা ঝাড়া দিয়েছিল বলে
তুমি আজ অনুরূপ উপেক্ষা শিখেছ
কবে কোন এককোষী অতৃপ্ত রয়ে গেছে বলে
আজ আমি প্রেমে পড়েছি তোমার

কয়েক মুহূর্ত পরে চুম্বকে লোহায়
আমাদের গল্প রয়ে যাবে
কোনও এক পরাগের অনুক্ত কামনার নীচে
থেকে যাবে
যাবতীয় প্রেমের কবিতা

Sunday, November 26, 2017

একটি ঝিল ও এক যুবক

একটি ঝিল ও এক যুবক
মুক্তিপ্রকাশ রায়

দ‍্যাখো, পুড়ে যাচ্ছে।
শূন‍্যতায় জ্বলতে জ্বলতে ছুটে যাচ্ছে নিষ্ফল
পাথরের পরিদের কাছে

তুমি ওকে ক্ষমা কোরো অযাচিত ঝিল
আগুনে পুড়তে পুড়তে কেউই
জলের গভীরতা মাপতে পারে না

কলসি উপুড় করা পরিটিও তো ভাবেনি
সকলই অনিত‍্য, যথা জমিদারি ... কলসের জল
এবার তোমার কাছে মুখ পুড়িয়ে এলে
তুমি ওকে অভিমানে ফিরিয়ে দিয়ো না

সংশয় আছে ... থাকে ...
সংশয় অপরাধ নয়;
যেমন
সব লেখা স্পষ্ট হওয়ার জন‍্য জন্ম নেয়নি

সংশয় মিটে গেলে
তাকে আর কবিতা বলে না

Wednesday, November 15, 2017

শিশুদিবসের প্রার্থনা: ২০১৭

শিশুদিবসের প্রার্থনা: ২০১৭
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ধমক দিলে মুচকি হাসে
বাঁধতে গেলে উধাও
উসকে দিলেও জ্বালায়, আবার
জ্বলবে যদি ফুঁ দাও
গোল্লা পেলে ঘোর বেহায়া
তোল্লা পেলে ব্লাশিং
কাণ্ড দেখে সবাই ভাবে
লেজ কেন নেই, বা শিং
পদ মানে না, ছক জানে না
বিপদ ডাকা স্বভাব
বিজ্ঞজনে বোঝায় তবু
কাটছে না এই raw ভাব
এমন শিশুই আসল শিশু
যার বাড়ে না বয়স
যায় আসে না আজ যদি তুই
ষাট অথবা ছয় হোস
জীবন আলিবাবার গুহা
রোজ সে শিশু অবাক
এমন শিশু এমন দিনে
সব বিষয়ে 'ক' পাক


Friday, November 10, 2017

কলম বনাম রাজামশাই

কলম বনাম রাজামশাই
মুক্তিপ্রকাশ রায়

রাজার এখনও
কলমে ভয়
এখনও লড়াই
কলমে হয়!
রাজার ভুঁড়ি বা
অর্গ‍্যাজম
সব কিছু নিয়ে
সারক‍্যাজম!
বেঁটেখাটো কবি
রোগা লেখক
ওঁচা কাগজের
প্রতিবেদক
মেডেল, মালাই,
উচ্চপদ
তবু খুশি নয়
এমনই বদ
সবকটা পাজি
বা বেইমান
ছড়াতে, কার্টুনে
যাবেই মান
জ্বালানে কলম
ধারালো নিব
বোঝে না মন্ত্র
টেক অ্যান্ড গিভ

Saturday, November 4, 2017

ডিকনস্ট্রাকশন

ডিকনস্ট্রাকশন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

তেরোই জানুয়ারি, দুহাজার। ডেটটা এখনও ভুলিনি দেখছি। একটা কাপের চা দুভাগে ভাগ করতে করতে বলেছিল প্রবাল -- মেয়েদের সিগনাল ক‍্যাচ করার চেয়ে ডিকনস্ট্রাকশন বোঝা সহজ।

তখন আমাদের সেকেন্ড ইয়ার চলছে স্কটিশে। আগেরদিন কান্তাদি-র থিয়োরিকণ্টকিত লেকচারটা পুরো ট‍্যান হয়ে গেছে।

     অবশ‍্য অনেকে মনে করতে পারেন যে মেয়েদের বোঝা ইংলিশ অনার্সের জন‍্য খুব একটা জরুরি নয়, গায়নিকোলজি বা সাইকোলজি হলে তাও বা ভাবা যেত। তবে সাহিত‍্যে হৃদয়বেদনার জায়গা তো আছেই। হস্টেলের ভাষায় যাকে 'চুলকুনি' বলা হয়। তার ওপর আমরা দুজনেই মফসসলের আমদানি, তায় চিরকাল বয়েজ স্কুলের ছাত্র। মেয়েদের সঙ্গে মেলামেশার অভিজ্ঞতা রাহুল গান্ধির রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার সমতুল‍্য হওয়ায় ছোঁকছোঁকানি বেশি; টিউশনে মফসসলি বান্ধবীদের থেকে টেস্ট পেপার চাইতে গেলেও গলা কেঁপে যেত, যেন কুপ্রস্তাব দিচ্ছি। পথেঘাটে পুংবন্ধুদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেলে মেয়েগুলো বাড়ির লোকের কাছে দাবড়ানি খেত।
     কলকাতার কলেজে ভরতি হতে এসে প্রথম দিনই মন একেবারে ফুরফুরে। কত্ত মেয়ে! তাদের পোশাক-আশাকে আলোহাওয়া চলাচলের কত-না ব‍্যবস্থা! মেয়েদের পোশাকের ব‍্যাপারে আমি চাইতুম পোড়া দেশে একটা বিপ্লব আসুক। ক্লাস নাইন-টেন থেকেই আনন্দলোকের পাতা থেকে সিডাকটিকিট সংগ্রহ করতুম। তবে আমাদের ওদিককার মেয়েগুলো কেমন যেন! একটু পিছিয়ে-পড়া টাইপ। অ্যাদ্দিনে যেন খরা কাটল। স্কটিশের মেয়েগুলোকে দেখে বাবা পর্যন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে গেল, দুনিয়া কত এগিয়ে গেছে!
     অনেক ফ‍্যান্টাসি নিয়ে তো ভরতি হওয়া গেল। ও মা! ক্লাস করতে গিয়ে দেখি মিনি স্কার্ট পরা মেয়েগুলো সব ভ‍্যানিশ! বেশিরভাগ মেয়েই সালোয়ার-কামিজ পরে এসেছে, কয়েকজন শাড়িও।
     যাক্কলা! সেই মেয়েটা গেল কোথায় যে শার্টটা জিনসের প‍্যান্টের বেশকিছুটা ওপরে গিঁট দিয়ে পরেছিল? ভেবেছিলুম ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের মেয়েগুলো একটু বেশিই খুল্লমখুল্লা হবে, যেমন বাংলা সিনেমার চেয়ে ইংলিশ সিনেমায় ইয়েটিয়ে একটু বেশি থাকে। কোথায় কী? ভুল করে অন‍্য কোনও ডিপার্টমেন্টে ঢুকে পড়িনি তো? ইত‍্যাকার সাতপাঁচ ভাবতেভাবতে ফ্রাস্টু খেয়ে লাস্ট বেঞ্চে গিয়ে বসে পড়েছিলাম। সেখানে আশুতোষ রানার মতো বড়ো বড়ো চোখ নিয়ে গম্ভীরভাবে সমস্ত ক্লাসটাকে আমারই মতো জরিপ করছিল আর একজন। এভাবেই আমার প্রবালের সঙ্গে আলাপ।

অলিভাকে শেষপর্যন্ত খুঁজে পাওয়া গেল ইতিহাসের ক্লাসে। আমার আর প্রবালের অন‍্যতম পাস-সাবজেক্ট ছিল ইতিহাস। পছন্দের বিষয়টি যে এতটা উত্তেজক হবে তা আগে বুঝিনি। অলিভা সেদিন অবশ‍্য শার্টে গিঁট দিয়ে আসেনি। লাল স‍্যান্ডো গেঞ্জিটাইপের জামা পরেছিল একটা। সামনের কাট-টা গভীর হওয়ায় ইতিহাস ক্লাসেও ভূগোলের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। গলা থেকে হারের লকেট হিসেবে ঝুলছিল একটা ক্রিস্টাল বল, যা স্তূপ পর্বত আর গ্রস্ত উপত‍্যকার ওপর গড়ানে পেন্ডুলামের মতো যাতায়াত করছিল।
     কিন্তু ধন‍্যি বিশ্বদেববাবুর কনসেন্ট্রেশন।  এইসব লোক তপস‍্যা করলে মেনকা-টেনকাও ধ‍্যান ভাঙাতে এসে  ফেল মারত। চোখের সামনে ওইরকম দৃশ‍্য দেখেও এতটুকু বিচলিত না হয়ে পড়িয়ে চললেন। স্কটিশে পড়িয়ে পড়িয়ে ওনার চোখে সব ক্লিভেজই পিয়োর ভেজ হয়ে গেছে ততদিনে।
     তো বিশ্বদেববাবু বোঝাচ্ছিলেন, আজকাল ইতিহাস নিয়েও চ‍্যাংড়ামি শুরু হয়েছে। ইতিহাসও নাকি বয়ান আর বিরুদ্ধ বয়ানের দ্বন্দ্ব। অবিসংবাদিত সত‍্য বলে নাকি কিছু নেই। দেরিদাকে উদ্দেশ করে বললেন (যদিও দেরিদা সেদিন ক্লাসে অনুপস্থিত)-- বক্তব‍্যমাত্রেই যদি ধোঁয়াটে হয়, তাহলে তুই বাজার করিস কী করে শুনি? আটা চাইলে দোকানদার কি তোকে ডাঁটা দেয়? যত্ত সব!
     এইসব হ‍্যালুমার্কা লেকচার শুনে প্রবালের মাথা কিঞ্চিৎ ঘেঁটে গিয়ে থাকবে। নয়তো ক্লাস শেষ হওয়ার পর আলাপ জমাতে গিয়ে খামোখা অলিভাকে বলতে যাবে কেন -- ভূগোল আমার খুব প্রিয় সাবজেক্ট, তোমার?
ভূগোল মানে? --স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিল অলিভা --এটা তো হিস্টরি ক্লাস ছিল!

এই দুর্ঘটনার পর নিউ বসন্ত কেবিনে চা খেতে খেতে আমরা ডিসাইড করেছিলুম -- এইসব ট‍্যাঁশ মেয়ের সঙ্গে আর আগ বাড়িয়ে কথা নয়। আমাদেরও তো একটা প্রেসটিজ আছে, না কি? কদিন আগে ডিপার্টমেন্টের অনিন্দিতা মুখের ওপর প্রবালকে বলেছিল -- তোকে না একদম হিন্দি সিনেমার ভিলেনদের মতো দেখতে! আমাকে হয়তো জনি লিভার-টিভার বলে। এরা নিজেদের ভাবেটা কী? ওয়েন্ডি ফিটজউইলিয়াম? তাও যদি সুন্দরীরা বোকা না হত!

এরপর আমরা ইতিহাসের ক্লাসে ইতিহাসেই মন দেওয়ার চেষ্টা করি। বিশ্বদেববাবু পড়িয়ে চলেন ঐতিহাসিকদের মতভেদ। বয়ান আর বিরুদ্ধ বয়ানের মাঝে দুলতে থাকে ক্রিস্টাল বল। আমরা কেউ আর ক্রিস্টাল বলে নিজের ভাগ‍্য খোঁজার চেষ্টা করি না। দেখতে দেখতে কলকাতায় গরম কমে আসে। অলিভার সঙ্গে, অন‍্যান‍্য বন্ধুর মতোই, কথাবার্তা-হাসিঠাট্টা শুরু হয়। সবই ক‍্যাজুয়াল কথাবার্তা। এমনকি দু-একবার আমি, প্রবাল আর কয়েকটা মেয়ে একসঙ্গে সিনেমাও দেখতে গেলুম। দলে অলিভাও ছিল। সিনেমা হলের আলো-আঁধারিতে প্রবালের দিকে তাকিয়ে দেখি সেও, আমার মতো, সিনেমাই দেখছে।

সেই অলিভা যে আমায় এত কাছের মনে করে তা আগে বুঝিনি। নইলে এত লোকের এত ভাট বকার মধ‍্যে কবে একবার বলেছিলুম --আমার ব্লাড গ্রুপ এবি নেগেটিভ-- সেটা মনে রাখে? বাগবাজারের বাড়ি থেকে একদিন কাঁদতে কাঁদতে সাতসকালে ওয়‍্যান হস্টেলে এসে হাজির, বাবাকে রক্ত দিতে হবে। ওর বাবার আর আমার একই গ্রুপ। নিজের মধ‍্যে যে এতবড়ো একটা সম্পদ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি, তা আগে জানা ছিল না। মনে হল এ-ডাক নিয়তির ডাক। মনে হল, নেতাজিই যেন আবার ডাক দিয়েছেন। আমি নিশ্চিত এবার রক্তের বদলে স্বাধীনতার চেয়েও বেটার অফার আছে। তড়িঘড়ি গোলপার্কে পৌঁছে অশোক ল‍্যাবোরেটরিতে দেওয়া গেল রক্ত। দেখলুম, অফারের ব‍্যাপারে খুব একটা ভুল করিনি। একঘর লোকের সামনে জড়িয়ে ধরে গালে চকাস করে একটা চুমু খেল অলিভা -- শিবু, ইউ আর আ ডার্লিং!

প্রবালের সঙ্গে নিউ বসন্ত কেবিনে চা খেতে গিয়ে রসিয়ে রসিয়ে সৌহাগ‍্যের গপ্পোটা করা গেল (সৌহাগ‍্য = হাগ পাওয়ার সৌভাগ‍্য)। তখনই প্রবালের দার্শনিক উক্তি: মেয়েদের সিগনাল ক‍্যাচ করার চেয়ে ডিকনস্ট্রাকশন বোঝা সহজ।

     বাঙালির দার্শনিকতা হচ্ছে হেরে যাওয়ার একটা লক্ষণ। ওই কারণেই প্রেমে ল‍্যাং খেয়ে এত লোক হাবিজাবি কবিতা লেখে। আমি বেশ বুঝতে পারলুম -- প্রবাল আমাকে একটু হিংসে করছে। ওরও তো অলিভার দিকে একটু টাল ছিল! হিংসে না হলে কয়েকদিন ছাড়া ছাড়া কেউ বলে 'কী রে, সেদিনের পর তোদের আর হাগাহাগি হল?'
     আমার অবশ‍্য একটু খারাপই লাগছিল। একই হস্টেলে থাকি। একসঙ্গে ওঠাবসা। অথচ একটা মেয়ের কিস মিস করে আমাদের বন্ধুত্বটাই ডিসমিস করে দিতে চাইছিল যেন প্রবাল। একদিন সহজ করার চেষ্টায় বললুম -- অলিভা ওর সঙ্গে আমায় বইমেলা যেতে বলছে।
- তো? আমাকে শোনাচ্ছিস কেন?
-'তো' মানে তুইও যাবি যদি চ। মজা হবে। আড্ডাটাড্ডা জমবে ভালো।
-পাগল? --হেসে বলল প্রবাল; পির‍্যামাস আর থিসবি-র মাঝে পাঁচিল হয়ে দাঁড়াতে আমি রাজি নই।

বইমেলার পথে বাসে মিডসামার নাইটস ড্রিমের কথা মনে পড়ছিল। নাটকটা অসাধারণ পড়িয়েছিলেন শবরীদি। প্রেম আর সম্পর্কের জটিলতা থেকে কতরকমের যে মজা তৈরি হয় নাটকটাতে! মাঝখানে তো আমার রীতিমতো কনফিউশন হত নামগুলো নিয়ে। কে যে কাকে ভালোবাসে -- সব যেত গুলিয়ে। বাসেই প্রথম অলিভা আমার হাত ধরেছিল।

কলকাতা বইমেলা এক আজব জায়গা। বই কত বিক্রি হয় জানি না, তবে বিরিয়ানির দোকান কোটিপতি হয়ে যাওয়ার কথা। লিটল ম‍্যাগ প‍্যাভিলিয়নে আবার পাগলদের কদর বেশি। যে যত এলিয়েন-মার্কা হাবভাব নিয়ে থাকতে পারবে, সে তত হিট। পাবলিকের মনোযোগ টানার জন‍্য কেউ দাড়িতে রামধনু রং লাগিয়ে আসে, কেউ সারা গায়ে পোস্টার লাগিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কেউ নামিবিয়ার বাচ্চাদের খাদ‍্যসমস‍্যা দূরীকরণের জন‍্য চাঁদা তোলে, কেউ প্রকাশ‍্যে গাঁজা টানে, কেউ গিটার নিয়ে ভালোভালো গানগুলো অভিনব সুরে গাইবার চেষ্টা করে। আমার এইসব দেখে মজা লাগে। তাই সেদিকেই হাঁটা লাগিয়েছিলুম, কিন্তু হাতে পড়ল টান। ও হরি! বাসে হাতটা অলিভা সেই যে ধরেছিল আর ছাড়েইনি! গোটা শরীর কেমন অবশ হয়ে গেল। ভাগ‍্যিস কলকাতায় পড়তে এসেছিলুম!

     তুই সঙ্গে থাকলে আমার খুব ভরসা হয়-- আইসক্রিম খেতে খেতে বলল অলিভা-- তোকে পেয়ে আমার একটা ভাই না থাকার দুঃখটা কেটে গেল।
-ভাই? -- আইসক্রিম খেয়ে গলাটা কেমন যেন বুজে আসছিল আমার।
-ভাই নয়? দ‍্যাখ না , তোর রক্ত বইছে এখন বাপির শরীরে, সেই রক্ত আবার আমার শরীরেও। উই আর লাইক ব্লাড রিলেশনস নাও।
মনে হল-- আমি, আমার চারপাশ, পায়ের নীচের মাটি সব যেন গলে গলে পড়ছে, অলিভার আইসক্রিমটার মতো। এইচ-এস অবধি সায়েন্স ছিল আমার । তাই শেষ চেষ্টা করা গেল -- হিমোগ্লোবিনের আয়ু বেশি নয়, জানিস তো? আমার সেই রক্ত কি কাকুর শরীরে এখনও...
-হি হি হি, শিবু, তুই না! তোর মাথায় কিছু আসেও বটে।
গোটা আর্গুমেন্টটাই বইমেলার ধুলোচাপা পড়ে গেল।

আবার হাত ধরে টানল অলিভা, একটু ওইদিকে চল না!
আমি আর পায়ে জোর পাচ্ছিলুম না। গলার স্বরে আট-আনা ক্লান্তি আর আট-আনা বিরক্তি-- ওদিকে কী আবার?
-ওই যে ওরা ছবি আঁকছে, আর্ট কলেজের স্টুডেন্টরা, ওখানে চ না একবার।
-ছবি আঁকাবি নিজের? আমার কিন্তু পোজটোজ দেওয়ার ধৈর্য নেই।
     নিজের ছবি নয়, মাথা নিচু করে লাজুক হাসল অলিভা, আশুতোষ রানা-র ছবি এঁকে দিতে বলব একটা। বেডরুমে রাখব।
-আশুতোষ রানা? -- আমার তখন চোখমুখ হিংসেয় সবুজ।
-তুই দেখেছিস তো ওর অভিনয়? ভালো না? বল? আমার তো জাস্ট ফাটাফাটি লাগে।

Sunday, October 29, 2017

তিরিশে অক্টোবর, ২০১৭

তিরিশে অক্টোবর, ২০১৭
মুক্তিপ্রকাশ রায়

(সুকুমার রায়-এর জন্মদিনে শ্রদ্ধার্ঘ‍্য)

মিলছে না তাল, লাগছে না সুর
জীবনযাপন গম্ভীর
মন্ত্র নেব পাগলা দাশুর
দেখব কোথায় কম ভিড়
কানের কাছে জীবন যেন
ভীষ্মলোচন শর্মা
সুর মিলিয়ে দে বাগদেবী
একটু দয়া কর মা!
বাড়ছে ভুঁড়ি, দেখলে মরে
কুমড়োপটাশ লজ্জায়
কাঠবুড়োরা ডিগ্রি বেচে
অ্যাকাডেমির দরজায়
পেঁচার মতো অন্ধ আইন
রাত করে চোর দিনকে
সব হেশোরাম স‍্যালুট মারে
শ্রী ব‍্যাকরণ সিংকে
রুমাল থেকে বেড়াল হলে
কে করে লেজ কর্তন
"ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না"
বলছে পরিবর্তন

Thursday, October 26, 2017

বিদ্বজ্জন

বিদ্বজ্জন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

("ভবসাগরতারণকারণ হে"-গানটির তালে পড়তে অনুরোধ করি)

আমি ধরতে রাজি ওঁচা ব‍্যক্তিরও পা
গুরু মানতে রাজি, যদি পাই শিরোপা
যদি পাউরুটি পাই, সাথে জ‍্যাম-ঝোলাগুড়
রাতকানা পেঁচাটিই যেন লক্ষ্মীঠাকুর
বুড়ো গাধাটি স্বয়ং লতা মঙ্গেশক‍র
কে যে কবিগুরু তুই তা এখন গেস কর
কাটা মুন্ডুকে বাঁধা রাখে রাজদরবার
সব পোষ‍্যরা খুশি, পেলে চিবোনোর হাড়
গজদন্ত মিনার চেপে আমরা ক'জন
ল‍্যাজ নাড়ি তবু লোকে ভাবে বিদ্বজ্জন

Saturday, October 21, 2017

সেই ছেলেটির গল্প

সেই ছেলেটির গল্প
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ধুরন্ধর বিচক্ষণ বয়স তার উনিশ-বিশ
রাত দুটোয় জাল গোটায়, ভাইফোঁটায় আব্বুলিশ
পদ‍্য নয়, টোপ ছড়ায়; ঝোপ বুঝে পানপরাগ
ভঙ্গিতেও জঙ্গিভাব, সঙ্গী তার জুকারবার্গ
সকাল তার শঙ্খদার, বিকাল তার নন্দনেই
গোঁসাইজির বাগানটির ফুলতোলাও বন্ধ নেই
শক্তিমান, ভক্তিমান, যখন চান এনজিও
সুবোদ্ধা মিস করেন, কিস করেন সেনদিও
এইপাড়ায় সাব-অল্টার্ন, ওইপাড়ায় দামিও সে
একটু ভয় সে-ই আমি, একটু ভয় আমিও সে

Friday, October 20, 2017

সুযোগ: অক্টোবর ২০১৭

সুযোগ: অক্টোবর ২০১৭
মুক্তিপ্রকাশ রায়

এসব আসলে কিছু নয়
অকাজের কিছুটা সময়
নিজেরই পকেট কেটে চুরি
পাঁচিলের জবাব হাতুড়ি

কিছু ফেনা, কিছু বুদ্বুদও
নদীর খেয়ালে উদ্ভূত
আতসবাজির মতো আলো
আমাদের ম‍্যাজিক শেখাল

আমাদের প্রেমে ও প্রমাদে
সহনে অথবা প্রতিবাদে
এসব আসলে কিছু নয়
সুযোগে উপচে যেতে হয়

Friday, October 13, 2017

আধুনিক

আধুনিক
মুক্তিপ্রকাশ রায়

একসময়ে ফোঁস ছিল খুব
এখন সবই অলীক
সময় যেন তেজের ফণায়
ঢেলেছে কার্বলিক
আয়না এখন ভেংচি কাটে
বায়না তবু অটল
বস ভেবেছে কুকুর, শ্বশুর --
প্লেটো, অ্যারিসটোটল
বন্ধুনেতা ছোঁ মেরে খায়
যেমন শকুন, কি চিল
এক রাজা যায়, আরেক আসে
এক রয়ে যায় মিছিল
আমার শুধু ক‍্যালি -- ছড়ায়
মিল দিয়েছি খেটে
সমালোচক ভাবেন পাছে
নিতান্ত ব‍্যাকডেটেড

Friday, October 6, 2017

কবিতার জন্ম

কবিতার জন্ম
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কথাগুলো উবে যায় কথোপকথনে

শব্দেরা হালকা হয়ে
গ‍্যাসবেলুনের মতো উড়ে যায় ভুল ঠিকানায়

গেরস্থালি ধৈর্য নিয়ে
একা-থাকা পেতে রাখে কেউ
ঘরোয়া দইয়ের মতো না-বলা কথারা
জমাট কবিতা হয়ে ওঠে

নীরবতা কবিতার জন্ম দেয় বলে
ঘুমন্ত শিশুর চেয়ে সফল কবিতা
          আজও কেউ লিখতে পারেনি

মায়ের কথা মনে পড়লে (৩)

মায়ের কথা মনে পড়লে (৩)
মুক্তিপ্রকাশ রায়

সকালের চা-টা আমার মায়ের সঙ্গেই খাওয়া অভ‍্যেস। অন্তত কয়েকমাস আগে অবধি এই রুটিনের নড়চড় হয়নি। বউও একটু জেলাস হত কি না কে-জানে! কপট রাগ দেখিয়ে মা-ন‍্যাওটা ছেলেকে তুলে দিয়ে বলত, যাও মায়ের সঙ্গে চা খেতেখেতে আদিখ‍্যেতা করে এসো।
     সকালের চা খেতেখেতে গুনগুন করে গান গাইত মা, "পুছো না ক‍্যায়সে ম‍্যায়নে র‍্যায়েন বিতাই"। এটা নাকি আবার দিদিমার প্রিয় গান ছিল। মা কখনও তেমন প্রথাগতভাবে গান না শিখলেও বেশ সুরেই গাইত। অনেকে মায়ের গান বৈঠকি আড্ডায় শুনে বলেছে, বউদির গলা তো বেশ মিষ্টি! মা শুনে লজ্জা পেত। দিদিমার রেওয়াজি গলার কণামাত্রও নাকি মা পায়নি। মাসিমণি অনেকটা পেয়েছে। আসলে সকালে আমি যখন মায়ের পাশে বসে চা খেতাম, মা অলক্ষে গল্প করে নিত দিদিমার সঙ্গে। ওই গানটার মধ‍্যে দু'জনের দেখা হত। আমরা বাইরে থেকে কিছু বুঝতে পারতুম না।
     আজ বুঝতে পারি ওই চায়ের সঙ্গে ফেলে-আসা দিনগুলো মিশিয়ে অদ্ভুত গাঢ় এক লিকার তৈরি করত মা। তাই সবজায়গায় চা খেয়ে আমি সেরকম তৃপ্তি পাই না। চায়ের সঙ্গে 'টা'-হিসেবে কয়েকটা মুচমুচে অ্যানেকডোট আমার চাইই চাই।
     আমার গোটা সকাল জুড়ে থাকত মায়ের ছোটোবেলার গল্প, নানারকম ক‍্যাবলামোর গল্প, জেঠতুতো আর মামাতো দাদাদিদির গল্প। প্রচুর ডিটেইলস মনে রাখতে পারত মা। পরে পরীক্ষা করে দেখেছি, যাদের কেন্দ্র করে গল্প, তাদেরই বহু কথা মনে নেই। বিশেষ করে, কে কবে কার প্রেমে পড়েছিল, সেই গল্প রসিয়ে রসিয়ে বলতে ভালোবাসত মা; আর গল্পের নায়ক বা নায়িকা, যাঁর এখন চুলে পাক ধরেছে, এ-হেন না-পাক গল্পকে প্রাণপণে অস্বীকার করতেন। আমাকে একান্তে এমন কথাও তাঁরা বলে গেছেন, তোর মায়ের মাথাটা পুরো খারাপ হয়ে গেছে, ভালো সাইকায়াট্রিস্ট দেখা।
     আমারও বিপদ হয়নি তা নয়। আরামবাগের কোন ললনার ওপর কৈশোরে আমি কিঞ্চিৎ ক্রাশ খেয়েছিলাম সে-গল্প আমার বউয়ের কাছে করে একবার গৃহযুদ্ধের অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। মজার কথা হল, বউ সে-সব গল্প আগে থেকেই জানত। কিন্তু, অতীতকে চোখের সামনে বর্তমান করে তোলার একটা জাদু-ক্ষমতা মায়ের ছিল। ফলত পুরোনো কাসুন্দির ঝাঁঝেও বউয়ের চোখে জল (এবং গলায় ঝাল) চলে আসা খুব স্বাভাবিক। তবে, নিজের বোকামি, শারীরিক ত্রুটি, এমনকি ক‍্যানসার নিয়েও যে-ব‍্যক্তি মশকরা করতে পারে, তার ওপর বেশিক্ষণ রাগ করে থাকা যায় না বোধহয়। তাই মায়ের গল্প টাইমবোমার সমধর্মী জেনেও আমার তুতো-দিদিরা যখন পঞ্চবাণাহত, তখন অসমবয়সী মায়ের সঙ্গেই অনসূয়া বা প্রিয়ংবদা পাতিয়ে হৃদয়ভার লাঘব করে গিয়েছিল।
     আজ মনে হয়, এই প্রবণতা, এই অতীতচারিতা, খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়। কেমন যেন মনে হয়, যাদের ভবিষ‍্যতে কোনও আগ্রহ নেই, তারাই সর্বদা অতীতের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। হয়তো তারা ভাবে যে তাদের সেরা সময়টা তারা কাটিয়ে ফেলেছে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাগিদ আর যেন অনুভব করে না তারা। আমার বিয়ে, চাকরি, সন্তানদের জন্ম, সংসারটা মোটামুটি দাঁড়িয়ে যাওয়া --মায়ের সামনে আর কোনও চড়ার মতো পাহাড় রাখেনি বোধহয়। মা তাই ভবিষ‍্যতের দরজা বন্ধ রেখে অতীতের খিড়কি দুয়োরে বসে থাকত সারা সকাল। বহু সংগ্রামের কালো রাত কেটে গিয়েছিল মায়ের। তাই হয়তো অলক্ষে থাকা কোনও জীবনদেবতাকে বলত, পুছো না ক‍্যায়সে ম‍্যায়নে র‍্যায়েন বিতাই।

শেষবার মায়ের সঙ্গে চা খাওয়া হল ত্রিবেণীতে। ভোরভোর পৌঁছে গিয়েছিলুম আমরা। তাও অনেকের পরে লাইন। সারারাত পেটে কিছু পড়েনি কারও। সবাই চা খেতে চলে গেল। আমি আর বাবা মাকে ছুঁয়ে বসে রইলাম। গঙ্গার ওপর লাল সূর্য উঁকি দিচ্ছে তখন। একটু পরে অঞ্জন এসে দাঁড়াল। দেখি, আমাদের জন‍্য চা এনেছে মনে করে। আমাদের তিনজনের জন‍্য।

দু'কাপ।

(চলবে)

Sunday, October 1, 2017

মায়ের কথা মনে পড়লে (২)

মায়ের কথা মনে পড়লে (২)
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মায়ের কথা মনে পড়লে আমার নাকে আলোচালের ফেনভাত আর ঘি বা মাখনের গন্ধ আসে। না, এ-কারণে নয় যে মা চলে যাওয়ার পর আমাকে হবিষ‍্য করতে হয়েছিল কিছুদিন। আসলে ছোটোবেলায় ওই খাবারটাই মা আমাকে আর বোনকে খাইয়ে ইস্কুলে পাঠাত।
     ভারতীয় সংস্কৃতির বৈচিত্র‍্যের মধ‍্যে ঐক‍্যের ধারা মেনে ভাতের সঙ্গে সহাবস্থান করত টম‍্যাটো, শীতকালে ফুলকপি, অন‍্যান‍্য ঋতুতে আলুসহ নানা সবজি। ওই খাবারের সঙ্গে ডিমসেদ্ধ থাকত সোনায় সোহাগার মতো। আমরা মহা তৃপ্তির সঙ্গে সাপটে খেয়ে ইস্কুলের পথে রওনা হতুম।
     হবিষ‍্য করার সময়ও আমার মনে হত ইস্কুলেই যাচ্ছি বুঝি। মাকে ছাড়া বাঁচতে শেখা এক কঠিন শিক্ষা ছাড়া আর কী। ইস্কুলে যে-সুশীলবাবুর চোখ সারাবছরই লাল হয়ে থাকত, তাঁর চেয়েও কড়া এক শিক্ষক আমাদের জীবন। তবে যে-খাবার মা আমাদের মুখে তুলে দিত, তার গুরুত্ব বুঝতে গেলে আর এক ইন্দ্রপতনের কথা মনে করতে হবে।
     দাদুর, মানে আমার ঠাকুর্দা রবি রায়ের, তখনও রাইগর মর্টিস শুরু হয়নি, গোটা আরামবাগ ভারী চিন্তায় পড়ে গেল --'এবার এরা খাবে কী?' সত‍্য বটে। দাদু ছিল পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব‍্যক্তি (যদিও ডাক্তার হিসেবে নামডাক থাকলেও দাদুর রোজগার কখনওই বেশি ছিল না। অন্তত সেই ডাক্তারবাবুর ধারেকাছেও নয় যিনি বাবার অ্যানজিওপ্লাস্টির জন‍্য অপারেশন থিয়েটারেই তাঁর গ্লাভস-পরা হাতে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা করতে চাপ দিচ্ছিলেন। স্বাধীনতা সংগ্রামীর দেশসেবার দুরারোগ‍্য বাতিকের সুযোগ নিয়ে পয়সাকড়ি কেউই দিত না বিশেষ। গরিবরা সত‍্যিই দিতে পারত না। অনেকে গরিব সাজত। তবু অন্নাভাব কখনও হয়নি। কিছু রোগী পয়সা দিতে পারত না, জমির ফসল নিয়ে আসত)।
     ফলে দাদু মরে গেলে হয়তো ঠাকুমার লাগানো আমগাছটা খেতে পাবে (সালোকসংশ্লেষ পড়িয়েছিলেন সুশীলবাবু), পোষা বেড়ালগুলো খেতে পাবে (ওদের পাড়াপড়শি 'ক‍্যাটক‍্যাট' করে কথা শোনালেও একটু মাছের কাঁটা বা ফেলে-দেওয়া ভাত কি আর জুটে যাবে না ওদের?), কিন্তু আমরা খাব কী?
     এ-বিষয়ে হোমরাচোমরা দু'একজন, যাঁরা দাদুর মরদেহে মাল‍্যদান করতে কলকাতার সদর পার্টিঅফিস থেকে ছুটে এসেছিলেন, এমনকী মন্ত্রীটন্ত্রী-জাতীয় প্রাণী, কোনও সমাধানসূত্র দিয়ে গেলেন না। প্রথমসারির দৈনিকে আর রেডিওয় দাদুর চলে যাওয়ার খবর সম্প্রচারের ব‍্যবস্থা করে দিয়েই ক্ষান্ত হলেন। কিন্তু দাদুর ধোঁওয়ায় বিলীন শরীরটার চেয়ে বেশি সময় ধরে ত্রিবেণীর বাতাসেও ভেসে রইল ওই প্রশ্নটাই: এবার এরা খাবে কী?
     দাদু ছিলেন মহীরুহের মতো। তাঁর শাখাপ্রশাখায় আত্মীয়, অনাত্মীয়, বন্ধু, শত্রু সকলেই জায়গা পেত। তাঁর থাকাটাকে আমরা মাথার ওপর আকাশ থাকার মতোই চিরন্তন ভেবে নিয়েছিলুম। এতটাই নিশ্চিন্ত ছিলুম আমরা যে বাবা তিন-তিনবার সরকারি চাকরি পায়ে ঠেলেছিল (এটা সম্ভবত এই লাইনে একটা রেকর্ড। পরে আমরা একটু থিতু হলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করব)।
     তো দাদু মর্তধাম থেকে বিনা নোটিসে বিদায় নেওয়ায় এইরকম একটা অ্যাবসার্ড পরিস্থিতি দেখা গেল যা গল্পে লিখলে উইলিং সাসপেনশন অব ডিসবিলিফ খাটবে না। বাড়িতে পাশ-করা একজন ডাক্তার থাকা সত্ত্বেও (হ‍্যাঁ, বাবাও ডাক্তার) মানুষজন বুঝে উঠতে পারছে না যে এই পরিবারের অন্নসংস্থান হবে কী করে!!!
     আমাদের আর একটা অ্যাটলাসের দরকার ছিল যে মাথার ওপর আকাশ ভেঙে পড়াটা ঠেকাতে পারে। সেই অভাব পূরণ করার মতো মনের জোর বাবার ছিল না। লোকজন মজা দেখতে জড়ো হচ্ছিল। কেউকেউ শুভানুধ‍্যায়ীর মতো জানতে চাইছিল বাড়ির জিনিসপত্র আমরা সস্তায় বিক্রি করতে রাজি আছি কি না; তাহলে তারা কিনে নিয়ে আমাদের সাহায‍্য করতে পারে। তখন মা হঠাৎ আমাদের ঘিরে নিল কোলগেটের সুরক্ষাচক্রের মতো। মা হঠাৎ বটগাছ হয়ে গেল।


ত্রিবেণীতে মায়ের গায়ে যখন ঘি মাখাতে হচ্ছিল, আমার মনে পড়ছিল আমি আর বোন কখনও না-খেয়ে ইস্কুলে যাইনি।

(চলবে)

Thursday, September 28, 2017

মায়ের কথা মনে পড়লে

মায়ের কথা মনে পড়লে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মায়ের কথা ভাবলেই আমার নাকে এ.ডি. অয়েলের গন্ধ আসে। ছোটোবেলায় শীতের রোদে ওই তেলটা মাখিয়ে আমায় শুইয়ে দিত মা। আজও এ.ডি. অয়েলের বোতল খুললে আরব‍্য রজনীর দৈত‍্যের মতো হুউশ করে বেরিয়ে আসে মনকেমনের একঝলক লিলুয়া বাতাস। অবচেতনের বাগদাদ শহরে হারুন-অল-রশিদের মতো ছোটোবেলাকে খুঁজে ফিরি আমি।
      পথে নামলে বোঝা যায় যে ছোটোবেলার সবকিছু টেডি বিয়ারের মতো তুলতুলে নয়। ভাঙা কাচের টুকরোয় হাত-পা কেটে রক্তারক্তির সম্ভাবনা প্রবল। অজান্তে নিজের ঠোঁটে হাত বুলোই একবার। ঠোনা মেরে একবার ঠোঁট ফাটিয়ে দিয়েছিল মা।
      তখন বাড়ির সামনের মাঠ থেকে ধুলো, কাদা মেখে বাড়ি ফিরতাম আমি। অপসংস্কৃতির কিছু অবাঞ্ছিত দাগও লেগে যেত গায়ে। বাড়ির কারও সে-সব পছন্দ ছিল না। হাজার হোক, সংস্কৃতি একটা অভ‍্যাসের ব‍্যাপার। বর্ণাশ্রমেরও। যে কর্নফ্লেক্স খেতে অভ‍্যস্ত, তার কাছে মুড়ি চিবোনো একটা আনকালচার্ড ব‍্যাপার। বাড়ির লোক 'ব্লাডি সোয়াইন' বা 'ব্লাডি বাস্টার্ড' কর্ণসহ মনে করলেও 'বেজন্মার বাচ্চা'-জাতীয় শব্দবন্ধকে ইতর বা 'আদার' জ্ঞানে পরিহার করে চলতেন। এর মধ‍্যে বাড়ির সামনের মাঠে আমি খেলার পরিসরে বর্ণাশ্রমের 'গেঁড়ো তুলতে' শুরু করেছিলাম। বিবেকানন্দের কতটা সুযোগ ঘটেছিল জানি না, কিন্তু আমি মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র ভারতবাসী, চণ্ডাল ভারতবাসী, মুচি, মেথর সকলকেই খেলার সঙ্গী হিসেবে সাদরে বরণ করে নিয়েছিলাম। তো, তাদের কাছ থেকে একটা নতুন শব্দাস্ত্র আয়ত্ত করা গেল --'খানকির ছেলে'। ছোটোবেলা থেকেই আমি পারফেকশনিস্ট। যে-কোনও শিক্ষা বহু অনুশীলনে নিখুঁত করে তোলার চেষ্টা আমার বরাবরের। আঁকার ক্লাসে খরগোশ আঁকা শিখে আমি বাড়ির মেঝে, দেওয়াল সব খরগোশময় করে তুলেছিলাম। বসতবাটীর এই আলতামিরাকরণে কোনও তিরস্কার তো জোটেইনি, বরং কিছু তারিফ পেয়েছিলাম বলেই মনে পড়ে। এই হাততালির লোভই (যা এখনও পূর্ণমাত্রায় বিদ‍্যমান) আমার কাল হল।
     বাড়ির উঠোনে যখন সঠিক মডিউলেশন-সহযোগে 'খানকির ছেলে' বলা অভ‍্যাস করছি, তখনই মায়ের মনোযোগ আকৃষ্ট হল: কী বলছিস?
আমি অলোকসামান‍্য সারল‍্যে কথাটা রিপিট করলুম। তখনই মায়ের হাত নেমেসিসের মতো উঠে এল। আমার ঠোঁট ভিজে উঠল রক্তে।
     আজও তাই গালাগাল দেওয়ার সময় মায়ের কথা মনে পড়লেই অভ‍্যাসগত প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় ঠোঁট চিনচিন করে আমার। ঠোঁটে একবার হাত বুলিয়ে মুছে নিতে হয় ছোটোবেলার ফোঁটাফোঁটা দাগ।

(চলবে)

Wednesday, September 27, 2017

অষ্টমীর সকাল, ২০১৭: একটি দাম্পত‍্যকলহ

অষ্টমীর সকাল, ২০১৭: একটি দাম্পত‍্যকলহ
মুক্তিপ্রকাশ রায়

(যাহা বলিব সত‍্য বলিব, সত‍্য বই মিথ‍্যা বলিব না)

ড্রাইভারের ওপর চটে গিয়েছিল বউ। আমাকে হাতের কাছে পেয়ে ঝাড়টা আমাকেই দেবে বলে মনস্থ করল, তুমি এসব ক‍্যালাস মাল কোত্থেকে জোটাও বলো তো?
মিনমিন করে বললুম, আমি কি আর কাউকে জোটাই? আমার জুটে যায়। এই যেমন তোমাকে কি আমি জুটিয়েছি? তুমিই জুটে গেছ।
ভাগ‍্যিস জুটে গেছি, বউ বলল, নয়তো এখনও বিয়ে হত না তোমার; ফ‍্যা ফ‍্যা করে ঘুরে বেড়াতে। আর একটা কথা, আস্পদ্দা তোমার কম নয়! আমাকে ড্রাইভারের সঙ্গে তুলনা করছ?
কেন?--সাফাই দিলুম আমি, তুলনাটা লাগসই হয়নি বলছ? সে আমার গাড়ি চালায়, আর তুমি আমার সংসার মায় গোটা জীবনটাই চালাচ্ছ। তুমি ড্রাইভার নও কীসে?
বউয়ের মুখে একটু ঝিলিক দেখা গেল।

আর তুমি শুধু ড্রাইভার নও, যোগ করলুম আমি, তুমি হচ্ছ গিয়ে screw driver। ভেঙে বলতে হবে?
-ছিঃ, অসোব‍্যো কোথাকার!

Saturday, September 16, 2017

বাসাবদল

বাসাবদল
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ডাক্তার বললেন, পুজোর আগেই
মায়ের নতুন বাড়ি হবে;
যে-ঘরটা ভেঙে পড়ছে
সে-ঘরে তোমায় আর থাকতে হবে না, মা

তোমার অযোগ‍্য ছেলে
পুরোনো বাড়ির সামনে অশ্রুবিসর্জন ছাড়া
কিছুই পারেনি;
ভালোই হয়েছে তুমি বেরিয়ে এসেছ; কাল
অভঙ্গুর ছাদের আশ্রয়ে
অন‍্য কাউকে ভাত মেখে দিয়ো

পুজো আসছে,
বদভ‍্যাসে তোমাকেই ডাকতে ডাকতে
আমাদের ছোটোনদীতীরে ফুটে উঠল কাশ;

বুঝলাম এইমাত্র গৃহপ্রবেশ হয়ে গেল

Thursday, September 14, 2017

বিসর্জনের পর ২

বিসর্জনের পর ২
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মা যখন গনগনে আলো হয়ে গেল
আমি বুঝলাম -- আমার জীবনে
এরপর অন্ধকার কত গাঢ় হবে

কাঁকড়া তো নিরীহ প্রাণী, খুব ভিতু, মানুষই বরং
তৃপ্তিসহকারে তার লাজুক মাংস খেয়ে থাকে
আসলে কাঁকড়া নয়
আমাদের কড়িকাঠে উই লেগেছিল

আমি দেখলাম
ঝাড়েবংশে উইপোকা পুড়ে যাচ্ছে মায়ের আগুনে
রোগমুক্ত মা যখন দপ করে সোনা হয়ে গেল
বললাম, সাবধানে যেয়ো

Wednesday, September 13, 2017

বিসর্জনের পর

বিসর্জনের পর
মুক্তিপ্রকাশ রায়

নাপিতের নির্বিকার ক্ষুর
মাথা থেকে আশীর্বাদ মুছে নিল
মায়ের আদর আমি
নদীর ঘাটে ফেলে রেখে এলাম:
সে আমার কতবড়ো ক্ষতি করে গেল
কোনওদিন বুঝবে না রোবট-নাপিত

নদীর হাঁ মুখে
আধসেদ্ধ চাল ঢেলে দেওয়ার সময়
আমার একটুও কান্না পায়নি
কিন্তু মায়ের মুখে লেগে থাকা পাটকাঠির ছাই
মুছে দিতে দিল না যে-পুরোহিত
তাকে আমি কোনওদিন ক্ষমা করব না

Thursday, September 7, 2017

কুকুর-কেত্তন

কুকুর-কেত্তন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেউ লেজ নাড়ে, কেউ বা একটু তেড়িয়া
কেউ হাবেভাবে বিলিতি, কেউ বা নেড়ি আর
ঘেউঘেউ করে। তবুও এ মাহ ভাদরে
পথঘাট তারা ভরিয়ে তুলছে আদরে
পোষা বা না-পোষা, অথবা ছাপোষা কত দল
কুকুরেরা এসে চেটে দিয়ে গেল পদতল
হাড্ডিতে খুশি, নাই থাক তাতে মাংস
মালিকের দয়া, ডিনারের ভগ্নাংশ
কুকুরেরা নাকি বোঝে না সহজ অঙ্ক
হাড্ডি না পেলে খ‍্যাঁক, ব‍্যস জলাতঙ্ক
তাই হয় যদি আজ নয় কিছু হোক লস
পোষা কুকুরের চাই চকচকে বকলস
এঁটোকাঁটা পেলে ঠিক পিছু নেবে ডগিরা
ইঞ্জিনপিছু যেমন রেলের বগি-রা

Thursday, July 13, 2017

দানরহস‍্য Daanrahasya

দানরহস‍্য
মুক্তিপ্রকাশ রায়

বাগে পেলে জ্ঞান দেয়
ওঠে যারা ডায়াসে
যে কেবল সায় দেয়
তবলার বাঁয়া সে
চেপে দেয় বাস-লরি
ছেপে দেয় এডিটার
কে কাকে অভয় দিলে
কেরিয়ার স্টেডি তার
খুঁজে খুঁজে কেটে গেল
এ-জীবন গাড়লের
ঘরে বউ বকা দেয়
ঠ‍্যাং কাঁপে বার হলে
মণীষীরা বাণী দেন
বেদনা কা কস‍্য
কে যে দেয়, কাকে দেয়
সেটাই রহস‍্য

Sunday, July 9, 2017

গদি Godi

গদি
মুক্তিপ্রকাশ রায়

গদি যাকে মারে, গদি যাকে ধরে
কোন হরি তাকে বাঁচায়?
খিদে-পায়খানা চেপে রাখি যদি
গদির মালিক না চায়
কোন ফুকো দিয়ে কে দ‍্যাখে কে জানে!
তালা দিয়ে রাখি চোখে নাকে কানে
হয়তো বগলে রেকর্ডার দেবে
সিসিটিভি ডান পাছায়!

আন্তর্জালে জাল পেতে গদি
কবি ধরে খায় খপাত
কলিকালে সব সাধনই বিফল
সিদ্ধি তো নাম জপাৎ
কেউ যদি লেখে গদির জীবনী
সে হয় সুবোধ, সেই সোনামণি
কেউ বলে, আয়, ধুলোটুলো ঝেড়ে
হাত পাতবি তো চ পাত



Friday, July 7, 2017

প্রোটেকশন Protection

প্রোটেকশন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

শোন ওরে ছোঁড়া
কালিদাস তোরা
এ 'আমরা-ওরা' chess খেলে
মুষলপর্বে
ভোটার মরবে
কে হাত ধরবে কেস খেলে?
শোন রে জঙ্গি
বা বজরঙ্গি
অঙ্গভঙ্গি বীভৎস
আমি আছি যার
ল অ্যান্ড অর্ডার
ছিঁড়বে তাহার কী বৎস?
শুধু মেপে জল
সাবধানে চল
বা কর্মফল go, take son!
আমাকে না বলে
হাঙ্গামা হলে
কে দেবে তাহলে প্রোটেকশন?



Wednesday, July 5, 2017

হঠকারীদের প্রতি Hothokarider Proti

হঠকারীদের প্রতি
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আয় না, আমার মাথায় চড়
পাইয়ে দেব, ধৈর্য ধর
কাজের খোঁজে বেকুব ঘোরে
ভাতায় খুশি ধুরন্ধর

যুবক পাবে পাড়ায় জিম
ভোটের ক'দিন পাড়লে ডিম
খুর চালালে বোনাস পাবে
সস্তাদরে শেভিং ক্রিম

দুধের সঙ্গে মর্তমান
রোজ খাওয়াব, শর্ত মান
দেখবে সবাই সাপের খেলা
বনগাঁ থেকে বর্ধমান

স্বর্গে আছিস, বেহস্তে
করবি আদাব, নমস্তে
তা নয়, শেষে ছোবল দিলি
বিপত্তারণ শ্রীহস্তে!

নৌকো করিস টালমাটাল
ডুবলে আমি, বুঝবি বাল-
-খিল‍্যরা সব, কে বাঁচাবে
কালকে তোদের? রাজ‍্যপাল?


Tuesday, July 4, 2017

সুশীলধর্ম Sushildhormo

সুশীলধর্ম
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কোনও দাঙ্গায় মরে না মন্ত্রী
মরে না এমপি-এমএলএ
মোল্লা-পুরুত মরার খবর
এসব কি সহজে মেলে?
নিরাপদে এঁরা সনাতন পথে
সহি ধর্মের দাবা-তে
বোড়ে দিয়ে বোড়ে নিকেশ করেন
হাঘরের হাতে হাভাতে
প্রশাসন না কি ভাবাবেগ রাখি
কঠিন বড়ো এ-অঙ্ক
রাজধর্মের হাত টেনে ধরে
ভোটবাক্সের সংকোচ
পুলিশের কাজ পুলিশ করবে
কেস দেবে লরি-বাইকে
ফেসবুকে লিখে জেলে যাবে কেউ
কেউ বা নিরীহ like-এ
আমিও ভাবছি চুপ থাকা ভালো
খরা-বন‍্যায়, রায়টে
বেহালা বাজাব নিরোর মতন
যদি বা কখনও বাই ওঠে



Sunday, July 2, 2017

উপোসী বাংলা Uposi Bangla

উপোসী বাংলা
মুক্তিপ্রকাশ রায়

তুমি   প্রেম বলে ভেবে নিচ্ছ
পাতি   অ্যাড্রিনালিন রাশ-কে
আমি   সমকামী প্রেমপত্র
লিখি    জীবনানন্দ দাশকে
তাই     জানলার পাশে সন্ধ্যায়
বৃথা      হাওয়া বয়ে যায় চৈতি
তুমি     ভাবছ যখন চুম্বন
আমি    মনেমনে রাজনৈতিক
আছি    চুপচাপ সেজে নিরীহ
যেন      প্রাইমারি টেট লক্ষ্য
আঁকা   দেশের ভাগ্য কপালে
তুমি      ভেবে নিলে বার্ধক্য
তুমি      সন্দেহ জ্বেলে রাখছ
একা     মনখারাপের জানলায়
যদি      চাও তার সাথে দেখা হোক
এসো   আমার উপোসী বাংলায়

('আশ্চর্য মলম' পত্রিকায় প্রকাশিত, ২০১৪)

Friday, June 30, 2017

নিম্নচাপ ১ Nimno chap 1

নিম্নচাপ ১
মুক্তিপ্রকাশ রায়

জলের উপরিতল দেখে বোঝা দায়
তার নীচে ডুবে গেছে পৃথিবীর অসমান মাটি

গুরুচণ্ডালি বৃষ্টিতে ডুবেছে কলকাতা
নর্দমা ছড়িয়ে গেছে
রাজনীতি অর্থনীতি কিছুই না মেনে

মহোল্লাসে হাঁটুজলে হা-ঘরে কিশোর
পেচ্ছাপ করছে, আর তার মূত্রস্রোত
অহংকারী চৌকাঠ দিয়ে
কলকাতা ঠেকাতে পারছে না

('ডুবসাঁতারের খেলা' কাব‍্যগ্রন্থে জানুয়ারি, ২০০৯-এ সংকলিত। 'সবুজ' পত্রিকার উদ‍্যোগে।)

Thursday, June 22, 2017

A Nationalist’s Dilemma


Plato, I believe, would never like to enroll me in his Academy where a sound body was deemed as indispensable as a sound mind. I am modest enough not to make pretensions to a SOUND mind, though what I have has served my purpose till date; but of this I am sure that I DON’T have a sound body, unless soundness is measured in terms of body-weight. My romance with games and sports was rather short-lived, as I was overburdened with academic assignments as early as class nine, and also because I did not quite like the rough boys who happened to be my playmates and who were strikingly creative in using expletives. We were birds of incompatible feather.
            Still, like my friends, I used to be very excited about watching cricket, especially ODIs before the match-fixing saga was ever heard of.  Being enthusiastic about cricket was one of the parameters of masculinity. We used to assemble at a friend’s place, sometimes with potato chips and cold drinks, and watch the feats of Tendulkar or Ganguly. When I first heard of betting, I felt betrayed and started distancing myself from the game. It seemed pointless to waste an entire day, swayed by violent emotions, when everything might be scripted. I thought, watching a movie was better than watching a cricket match because in the former there was no camouflaging of fictionality. A movie would not lie since it made no claims to truth. Nevertheless the issue of cricket has recently resurfaced in my life. It is impossible to ignore it anymore. It is no longer a game. It has become a political domain. At least for India and Pakistan.
            I saw a viral video on facebook yesterday (22/06/2017) which showed a Hindu boy from Bolepur, being violently manhandled by an angry mob, since he had declared his love for Pakistan after India’s miserable defeat at the recent ICC Champions Trophy Final on 18 June (2017). He was being treated as an enemy of the state, even a jehaadi (Muslim militant) in disguise. He was being verbally abused, beaten and was told to kiss the holy Indian ground and burn a Pakistani flag. So, a game was a nationalist issue for the outraged mob who could not stand anyone admiring a team from an ‘enemy nation’. This creates a dilemma in the most ironical sense of the term.
            I remember my friends dividing themselves into different camps during the football world cups and support Brazil or Argentina with impunity. Nobody told them that their patriotism was suspect because they worshipped Maradona rather than Chuni Goswami. This is a very common practice even today. Then why does the ambience become tense over an India-Pakistan match? Why this double standard? Why cannot anyone support Pakistan in a match, burst crackers at its win, without forfeiting his/her identity as a patriotic Indian?
The reason may be traced to the history and geopolitics of our subcontinent. And history often privileges reality over legitimacy. Is not the game inflected by the memories of bloody battles fought between the two countries which make any amiable exchange problematic (though ‘desirable’)? Do not the reports of cross-border shelling make us wince at the harmless crackers? Do not our minds play tricks on us and superimpose the image of the Pakistani army onto the Pakistani cricket team? It may sound unjustifiable to intellectuals but history may have made us paranoid about national security and so, supporting Pakistan on the Indian soil seems to be insupportable. Remember, we have fought no war with Brazil or Argentina. So, a Brazilian jersey on an Indian football-enthusiast does not become an eyesore.

But I cannot help thinking that the game of cricket itself is a colonial legacy. Do we not reiterate the narrative of our cultural enslavement by playing the game that our conquerors had taught us? Can we reconcile cricket with the nationalist agenda? Can we support any cricket team at all without undermining our national game, i.e. Kabaddi?

Saturday, April 22, 2017

বাস ১

বাস ১
মুক্তিপ্রকাশ রায়

হেডলাইট জ্বেলে দিতে
রাস্তায় গড়িয়ে নামল কনে-দেখা আলো;
হিসেবি কন্ডাক্টর পয়সাকড়ি বুঝে নিয়ে
তোমার পাশের সিট তুলে দিল নিরাপদ হাতে;
বাঁধানো রাস্তা ধরে উলু দিয়ে চলে গেল বাস

কালো ধোঁয়া ভেসে থাকল
আমার শরীর ঘিরে
অপমানের মতো কিছুক্ষণ

টিকিটবিহীন আমি,
একদিন দেখো, ঠিক
কালো বেড়ালের মতো রাস্তা কেটে যাব

('মুঠোভরা বালি' কাব্যগ্রন্থ, ২০১৩, 'ঘাট পত্রিকা'র উদ্যোগে প্রকাশিত)

Wednesday, April 19, 2017

অপমান

অপমান
মুক্তিপ্রকাশ রায়

যখনই বিঁধে যায় সহসা তলপেটে সুপরিকল্পিত  ধারালো অপমান
তখনই জল পড়ে, তখনই পাতা নড়ে, কী হয় তারপরে কে রাখে সন্ধান
কিছুটা যন্ত্রণা, কিছু কুমন্ত্রণা, কিছুটা গিলে খাওয়া নিজের পাপবোধ
নিজেরই হাতে যেন নিজেকে খুন করে নিজেই নিতে চাওয়া খুনের প্রতিশোধ
বামন, তবু যেন আঙুলে ভর করে চেয়েছি ছুঁয়ে দিতে লাস‍্যময়ী চাঁদ
দীপ‍্যমান যারা, আকাশে ছায়াপথে, কীভাবে ক্ষমা করে এ-হেন অপরাধ
রেশমকীট তাই নিজের চারপাশে সুচারু বুনে নেয় যে-একাকিত্ব
বাইরে তার কোনও আগুন জেগে নেই, দু'চোখে লেগে থাকে বৈপরীত‍্য
ছাই তো উড়ে যায়, সে-ক্ষত সেরে যায়, ক্রমশ জুড়ে যায় পঞ্জরাস্থি
তবু সে-স্মৃতিভার কবির ক্রুশকাঠ, কবির গৌরব, কবির শাস্তি

('মুঠোভরা বালি' কাব্যগ্রন্থ, ২০১৩, 'ঘাট পত্রিকা'র উদ্যোগে প্রকাশিত। )

Saturday, April 15, 2017

নববর্ষের কবিতা ১৪২৪

নববর্ষের কবিতা ১৪২৪
মুক্তিপ্রকাশ রায়

অনন্ত মধ‍্যযুগ আমাদের ললাটলিখন
তবুও স্বভাবদোষে জীবনের দিকে পাশ ফিরি
পটের নদীর মতো বয়ে যায় দিন-মাস-সন
তবু নববর্ষে দ্বারে হাত পাতে অন্ধ ভিখিরি

অন্ধ, কেননা জানি ভালোবাসা অন্ধ হয়ে থাকে
তাহলে যা চাই তা কি দ্বিধাহীন মুক্ত ভালোবাসা?
যে-প্রেমে অঙ্কুর বাড়ে, বৃষ্টি বুকে জড়ায় খরাকে
সে-মিলনসম্ভাবনা পৃথিবীর কাছে প্রত‍্যাশা?

অথচ পৃথিবী আজ কারাগার, প্যানোপটিকন
সহস্র চোখে মানা, নিষেধের উঁচোনো তর্জনী
নতুন নাট‍্যকার রোমিওকে ধরাল সমন
শিল্প হল কাটা জিব, উপড়ানো দু'চোখের মণি

মানুষকে নয়, ছায়ামূর্তিকে ভালোবাসা রীতি
দুঃস্বপ্নে ভিন্নতার রক্তের পিপাসু টোটেম
চাপাতিরা ভয় পায় জিজ্ঞাসাচিহ্নের আকৃতি
শাকান্নের বিলাসিতা, সঙ্গসুখ, নাজায়েজ প্রেম

পরিত‍্যক্ত কামানের মুখে তবু বেপরোয়া ফুল
দৈববাণীর মতো মুছে দিতে চায় সব শোক
অভয়বাবুর মতো মাফ করে ছাত্রদের ভুল
মনে হয় স্নেহশীল ঈশ্বর বলবেন--
তোমাদের নিরাময় হোক