Monday, April 9, 2018

গণতন্ত্র: আমাদের ঈশ্বর

গণতন্ত্র: আমাদের ঈশ্বর
মুক্তিপ্রকাশ রায়

গণতন্ত্র জিনিসটা ভগবানের মতো। সবাই বিশ্বাস করে যে গণতন্ত্র আছে, অথচ কেউই তা চোখে দেখেনি। বিশ্বাস না করে উপায় কী? বিশ্বাসে মিলায় রাম/ আল্লা/যিশু, তর্কে ঢিশুম/চাপাতি/ ইনক‍্যুইজিশন। গণতন্ত্রেও অবিশ্বাসীদের জন্য বিভিন্ন দাওয়াই আছে।
     অনেকেই অবশ্য দাবি করে -- তারা নাকি গণতন্ত্র চর্মচক্ষে দেখেছে, যেমন অনেক মহাসাধক/সাধিকা ভগবানের দর্শনলাভ করেছেন বলে শোনা যায়। এসব দাবি মিথ্যে নয়। তবে দুটো ব‍্যাপারই পরিস্থিতি-নির্ভর। ভক্তের ভরাপেট অবস্থায়, দিনদুপুরে, বাজারের মাঝখানে যেমন ভগবান দেখা দেন না; গণতন্ত্রও সারাবছর সর্বত্র দেখা যাওয়ার কথা নয়।
     আপনি যদি তপস্যা করেন; অর্থাৎ খাওয়া-ঘুম ত‍্যাগ করে, গা-ছমছমে শ্মশান-টশানে বসে, দিনকয়েক ভগবানের নাম জপ করেন, খাদ‍্য-জল ইত‍্যাদির অভাবে শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়াম-ক‍্যালসিয়ামের অনুপাত ঘেঁটেঘুঁটে গিয়ে আপনি নানা অলৌকিকতা প্রত‍্যক্ষ করবেন এ-সম্ভাবনা বৈজ্ঞানিকেও মানতে বাধ্য। কোনও উপযুক্ত পরিবেশে, ধরা যাক কোনও জনহীন মিউজিয়ামে, ডাইনোসরের কঙ্কালের সামনে বসে একইভাবে ডাইনোসরের ধ‍্যান করলে তার দর্শনলাভও অসম্ভব নয়। গণতন্ত্রও সেইরকম। আপনার শহুরে অফিসের মিটিঙে, বা স্টাফরুমের মোড়ল-নির্বাচনে তার ঝলক দেখা গেছে বলে রাজনীতির সভয়ারণ‍্যেও যদি আপনি তার দর্শনপ্রত‍্যাশী হন, তাহলে আপনি আবালক।
     রাজনীতি কথাটাই রাজতন্ত্র-ঘেঁষা। এবং রাজতন্ত্র খুবই সৎ এক শাসনপদ্ধতি। এখানে কোনও লুকোছাপার ব‍্যাপার নেই। যার ক্ষমতা আছে, সে সবার ওপর ছড়ি ঘোরাবে, ব‍্যস। খুবই যুক্তিসঙ্গত দাবি। জঙ্গলেও এই নিয়মই চলে। সেখানে জোর যার, মুলুক তার। যে শাসিত হয়, তার কাছেও ছবিটা পরিষ্কার। কেউ হরিণকে এটা অন্তত বোঝায় না যে বাঘ-সিংহের পেটে যাওয়ার ব‍্যাপারটা সে নিজেই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে বেছে নিয়েছে। হরিণ জানে -- সে কী চায় তাতে কিস‍্যু যায় আসে না। সে দুর্বল। অতএব তাকে বাঘসিংহের দাদাগিরি সহ‍্য করেই বাঁচতে হবে। আমরাও সমাজে ক্ষমতাবানদের সামনে নতজানু হয়েই বাঁচি। তফাত এই যে আমরা বোকার মতো ভেবে নিয়েছি-- এটা আমাদের যৌথ সিদ্ধান্ত, কেন-না আমাদের ভোটার কার্ড আছে।
     রাজতন্ত্র আসলে ডোডোপাখি হয়ে যায়নি এখনও। গণতন্ত্রের ছদ্মবেশে সে এখনও আমাদের পুতুলনাচের অদৃশ্য বাজিকর। গণতন্ত্র ব‍্যাপারটাই আসলে রাজতন্ত্রের সামান্য বিকেন্দ্রীকরণ। আগে একজন রাজা দেশ শাসন করতেন। এখন সেই ক্ষমতা বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর ওপর বর্তেছে। তবে ওই গায়ের জোরের ব‍্যাপারটা রয়েই গেছে। জোরটা খাটানো হয় চয়েস-কে বাধা দিয়ে নয়; বরং সব চয়েসকে হবসনস চয়েসে পরিণত করে।
     আপনি জমিদারি ব‍্যবস্থার ওপর বিরক্ত; জমিদারি উচ্ছেদের পর গণতন্ত্রের জয়গান গাইতে গাইতে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছে দেখলেন যে পাঁচজন প্রাক্তন জমিদারের মধ‍্য থেকেই একজনকে বাছতে আপনি বাধ‍্য। হয়ে গেল সমাজব‍্যবস্থা পরিবর্তন, কেমন? 'ফ্রিডম' নামের এক প্রবন্ধে জর্জ বার্নার্ড শ গণতন্ত্রের এই পরিহাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।
     লাল আর নীল জামার মধ্যেই যদি একটা বাছতে হয় আপনাকে, তাহলে আপনি  চাইলেও হলুদ জামা বাছার সুযোগ পাচ্ছেন না। তাহলে আপনার পছন্দের আর মূল্য কোথায়? ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যে বোমা, গুলি ইত‍্যাদি চলে তা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা ইতিহাসের পরম্পরা। আপনার পছন্দকে প্রহসনে পরিণত করাই এর উদ্দেশ্য। যার ক্ষমতা আছে, সে অতীতে রাজতন্ত্রের লড়াইয়ে যেমন জিতেছে, আজ গণতন্ত্রের খেলাতেও সে জিতবে। ফাউল করে হলেও জিতবে। কাউকে নিজের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে না দিয়ে সে প্রমাণ করবে সে-ই সবার একমাত্র পছন্দ।
     তাই আমি শুরুতেই বলেছি আমার সংশয়ের কথা। গণতন্ত্র বলতে যা বোঝায়, তা সম্ভবত বাস্তবে নেই। ধনতন্ত্র আছে, কেন-না পয়সাওয়ালা লোকজন রাজনৈতিক দলগুলোকে স্পনসর করে; তাই যাবতীয় নীতি তাদের মুখ চেয়েই নির্ধারিত হয়। Gun-তন্ত্রও আছে। বন্দুকের নল আর ক্ষমতাদখলের কৌশল খুবই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। তবে গণতন্ত্র সম্ভবত সংবিধানের দু-মলাটের বাইরে এখনও বেরোতে পারেনি।
     আর গণতন্ত্র বোধহয় খুব একটা যুক্তিসংগতও নয়। কেন সবার মতামতের দাম সমান হবে বলুন তো? অমর্ত্য সেন আর পাড়ার গোবরা মস্তান -- দুজনের বোধবুদ্ধি কি এক? অথচ গণতন্ত্রে দুজনেরই মতের সমান দাম; দুজনের একটা করেই ভোট! আমরা সব ব‍্যাপারে এক্সপার্ট ওপিনিয়নে বিশ্বাসী। কানের সমস‍্যায় কেউ চোখের ডাক্তারের মতামত জানতে চায়  না। তাহলে দেশ চালানোর মতো একটা সিরিয়াস ব‍্যাপারে সবাই মতামত দেবেই বা কেন?
     আবার নিজের মত-ও কি আসলে নিজের মত? কেমব্রিজ অ‍্যানালিটিকার ঘটনাটা শুনেছেন নিশ্চয়ই। এইধরনের সংস্থা ফেসবুক-জাতীয় সোশাল নেটওয়ার্ক থেকে আপনার মতামত-সংক্রান্ত তথ্য চুরি করে। তারপর কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের থেকে টাকা খেয়ে তাদের সপক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে আপনার ওপর ভুলভাল তথ‍্যাক্রমণ শুরু করে। ফলত ভোটের দিন আপনার প্রোগ্রামড আঙুল ইভিএম-এ নির্দিষ্ট দলের বোতামের দিকে এগিয়ে যায়।
     ভিতর থেকে আপনার অগোচরে আপনাকে এইভাবে চালিত করে যে-শক্তি, তাকেই সম্প্রতি আমেরিকা চিনেছে 'ডোনাল্ড ট্রাম্প' নামে। ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে এই শক্তিরই নাম 'ঈশ্বর'।

আমার কাছে, বিশেষত ভোটের আগে, 'গণতন্ত্র'।

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Saturday, April 7, 2018

মাটনবিলাসী ও অদ্বৈতবাদ

মাটনবিলাসী ও অদ্বৈতবাদ
মুক্তিপ্রকাশ রায়

বেশিরভাগ বাঙালির মতোই খাসির মাংস আমার খাস পসন্দ। বাঙালির আর দোষ কী! তার বর্ণপরিচয়ই শুরু হয় "অ-এ অজ" দিয়ে। পাঁঠাও অজ, আর হজমের পক্ষেও ভালো বটে, তবে চর্বি  কম থাকায় চর্বিতচর্বণ-জনিত সুখ ঠিক জমে না। আপনিও লক্ষ করে থাকবেন -- সুস্বাস্থ্যকে একটু হ‍্যাম্পার না করলে জিভকে ঠিকঠাক প‍্যাম্পার করা যায় না।
     বেশিরভাগ বাঙালির মতোই আমি এবং আমার পরিবারবর্গ খাসি বা পাঁঠার মাংসকে 'মাটন' নামে অভিহিত করে থাকি। আরামবাগের কোনওকোনও বিয়েবাড়িতে মেনুকার্ডে 'মর্টন'-এর উল্লেখও দেখেছি। আপনি যদি ইংরেজি নিয়ে খুঁতখুঁতে হন, তাহলে মাটনের সঙ্গে ছাগলকে ভেড়া-নোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারেন; তবে তাতে ছাগলের সঙ্গে গাড়লসম্প্রদায়ের মেষামেষির ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে পারবেন বলে 'পেত‍্যয়' হয় না।
     আরামবাগ এলাকায় আমরা মাঝেমধ্যে মাটনকে ফলের পর্যায়েও ফেলে থাকি। বিশেষ করে অনুষ্ঠানবাড়িতে পরিবেশক অনবরত জানতে চান -- মাটনের 'জুস' লাগবে কি না। এ কিন্তু 'সমোসকিতো' 'যূষ' নয়। ফ্রুটজুসেরই গোসতুতো ভাই। তবে সচেতনভাবে 'যূষ' বললে ব‍্যাপারটা মানহানির হয় না। আমি এইসব যুক্তি দিয়েই শহুরে আত্মীয়দের বাঁকা হাসি ট‍্যাকল করে থাকি।
     এসব ক্ষেত্রে সেরা থিয়োরি হচ্ছে অদ্বৈতবাদ। স্রষ্টা নিজেই সৃষ্টিতে পরিণত হয়েছেন। আসলে সেই পরম 'এক' ভিন্ন কিছু নেই। মাটির ঘোড়া, মাটির হাতি, মাটির পাখি দেখতে আলাদা হলেও, সবই আসলে সেই মাটি। তাহলে আর মাটনের জুস হতে আপত্তি কী? ছাগলকে একপ্রকার কমলালেবু ভাবলেই ল‍্যাঠা চুকে যায়।
     ছাগলই বলুন বা কমলালেবু,  সবই স্রষ্টার রূপভেদ। রূপের বিভিন্নতা আসলে মায়াবদ্ধ জীবের দৃষ্টিবিভ্রম। বিজেপি, বজরং দল, আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ -- ইত‍্যাদি সংগঠনের সদস্যরা যদি বেদান্ত পড়ত,  'রামছাগলে' ভগবান ও ব‍্যা-জুবান যে একীভূত হয়েছেন, তাতে তাদের আপত্তির কিছু থাকত না। নিজে শাকাহারী বলে বাঙালিকেও 'ঘাসফুস' খাওয়ানোর জন্য এতটা উঠেপড়ে লাগত না। 'খাসি' যে আসলে 'ঘাসই' সেটা বুঝে গেলেই তো ...

     বউকেও মাঝেমধ্যে ব‍্যাপারটা ভেবে দেখতে বলি আমি। একটু মুটিয়ে গেছি বলে সে আমার খ‍্যাঁটন থেকে মাটনকে বাদ দিতে চায়। আমি তাকে এই অদ্বৈতবাদে দীক্ষিত করার চেষ্টায় আছি। ভেবে দেখুন-না, ছাগল সারাজীবন খায় কী? ঘাসপাতাই তো? তাহলে তার গায়ে যে-মাংস আমরা দেখি, তা তো পরিবর্তিত ঘাস ছাড়া কিছুই নয়! খাসির মাংসকে মাংস দেখা এই মায়ার জগতের দৃষ্টিবিভ্রম নয় কি? আত্মজ্ঞানী এই ভুল কদাপি করবেন না।
     বউ এইসব আলোচনা শুনলে ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। খুব একটা কনভিন্সড হচ্ছে বলে মনে হয় না। কী আর করা যাবে, মায়াবদ্ধ জীব! তবে বরফ একদিন গলবেই, এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
     আজই কলেজ-ফেরতা একটু মাটন কিনে নিয়ে গেলে কেমন হয়? মাটন থাকতে চিকেনের মতো জোলো জিনিস খায় কেউ?

বিশেষত এই 'অজ' পাড়াগাঁয়ে?

০৭/০৪/২০১৮

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#মাটনবিলাসী

Wednesday, April 4, 2018

ভোট এলে

ভোট এলে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভোট আসে মাঝেমাঝে
আমাদের পাড়াতে
কেউ বাঁধে বোমা, কেউ
শান দেয় খাঁড়াতে
কেউ চায় ঝাড়পিট
কেউ তার বিরোধী
কেউ চায় -- যারা আছে
তারা থাক চিরদিন
টেনশনে রাত জাগে
সরকারি চাকুরে
ফেঁসে গিয়ে নিজ হাতে
এ-কবরটা খুঁড়ে
লাভ কী বা এই সাদা
কলারের মাঞ্জায়
ভোটে যদি ঘোঁট পাকে?
চোট লেগে প্রাণ যায়?
গণতান্ত্রিক দেশে
একনলা দোনলা
ভোট দেয়, ভোট নেয়
কোথাও বা কোনও লাশ
অপলক চোখে দ‍্যাখে
এ-পাড়া ও-পাড়াতে
সিসে হয়ে ঢুকে যায়
ভোট শিরদাঁড়াতে





Friday, March 30, 2018

হনুকরণ

হনুকরণ
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আমিও হনুমান, তুমিও হনুমান
এ ডারুয়িন নয়, আমারও অনুমান
ক্ষমতা বড়ো দায়, যা কিনা পলিটিক্স
ধারালো ছুরি খোঁজে গলার নলিটি
এতে কি ভোট আসে? তবে তা বৈধ
দু-চারজন যদি হয় শহিদ হোক
যাক না ঘেঁটেঘুঁটে কলি-তে ত্রেতা-তে
কে তাতে বিচলিত? ব‍্যথিত কে তাতে?
তোমার পুঁজি ঘৃণা, আমি কি পিছিয়ে?
রেখেছি ভোটজাল সেভাবে বিছিয়ে
যেভাবে তুমি মাপো কে বেশি হিন্দু
তোমাকে বেচে খায় তোমারই নিন্দুক
দু-জনা দুটি দিক একই সে কয়েনেই
ভোট বা টস হোক, হারার ভয় নেই

Saturday, March 24, 2018

সাফাই

সাফাই
মুক্তিপ্রকাশ রায়

সবাই জানে -- হিন্দু ছাড়া আর সকলে রাক্ষস
সবাই জানে -- মুমিন ছাড়া অন‍্য সবাই কাফের
অস্ত্র তো নয়, ফুলঝাড়ু এ, দেশপ্রেমের সাক্ষ‍্য
রক্তেটক্তে ভেজাল থাকা ভীষণ পরিতাপের

রামনবমী আর মহরম পালনে হয় পুণ্য
একটু দাপট, উত্তেজনা, নইলে কীসের উৎসব?
অনার্য-মুশরিক-মালাউন হোক-না মনঃক্ষুণ্ণ
মাংসপেশি দূর করে দেয় ডেমোক্রেসির খুঁত সব


Wednesday, March 21, 2018

জলাঞ্জলি

জলাঞ্জলি
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভেলা জলে ভাসে, ফেরি যায়-আসে
বিজ্ঞান জানে -- প্লবতা
তবু নৌকায় ঠিক বোঝা যায়
জলের মহানুভবতা
জল ঘিরে থাকে জন্মেরও আগে
জল অভিমুখে শেষটান
জিভে, নদীচরে, গাছেরও শিকড়ে
একইরকমের তেষ্টা
তিনভাগ জলে মাটি ভেসে চলে
নীল চেনা এক গ্রহ তা
যেরকম প্রাণ চির-চলমান
কেউ কেউ বলে বহতা

Sunday, March 18, 2018

শুভাকাঙ্ক্ষী

শুভাকাঙ্ক্ষী
মুক্তিপ্রকাশ রায়

সব্বার ভালো হোক আমি চাই
সক্কলে খুব সুখে থাক
যে হতে চাইছে সে দুষ্টু হোক
অন‍্যরা গুড বুকে থাক
নিরামিষ খাক যে খুব নিরীহ
খুন চুষে খাক যে-খুনি
যুদ্ধবাজেরা খুশি হোক ফেলে
পরমাণু বোমা এখুনি
আমাদের মতো আমরাও খুশি
যুদ্ধবিরোধী মিছিলে
গিরগিটিকেও প্রশ্ন করি না
গতকাল তুমি কী ছিলে
তৃণমূল থাক, কংগ্রেসও থাক
বিজেপি এবং সিপিএম
জনতা চাইলে ভাতঘুম দিক
টুয়েলভ নুন টু থ্রি পি.এম.
সব মন যেন ফুরফুরে হয়
কেটে যায় দুশ্চিন্তা
স্টেটাস কুয়োর জলে ভাসমান
ইনকিলাবের দিন থাক

Saturday, March 17, 2018

বাধ‍্যবাধকতা

বাধ্যবাধকতা
মুক্তিপ্রকাশ রায়

এইভাবে তুই বাঁচতে বাধ্য
এই সুরে তুই নাচতে বাধ্য
গণতন্ত্রের অর্থ বোঝা
একটু এখন কষ্টসাধ্য

দেশপ্রেমকে গিলতে বাধ‍্য
(মাথাতে একচিলতে ছাদ তো!)
এখন মন্ত্রী ঠিক করে দেন
কোনটা হালাল, কী অখাদ্য

করের টাকা গুনতে বাধ‍্য
মিথ্যে কথাও শুনতে বাধ্য
আর যেটুকু বলতে পেলি
ওটা নিছক আর্তনাদ তো

হাম ভি মিলিটারি

#মুক্তিপ্রকাশরায়

একটি আইন লাগু হতে চলেছে। সরকারি চাকরি পেতে হলে এরপর হয়তো পাঁচবছর মিলিটারি সার্ভিসের অভিজ্ঞতা লাগবে। সেই প্রসঙ্গে কয়েকটি লাইন।

হাম ভি মিলিটারি
মুক্তিপ্রকাশ রায়

প্রভু, ছিপছিপে রেখো
মিলিটারি জিপে রেখো
পোস্টিং দিয়ো সিয়াচেনে
রাজার যা কিছু দাবি
সকলই মেটাব ভাবি
বলব, নে, আর কী আছে নে
ফ্রন্টে শেখাব টেনস
বেড়ে যাবে সাসপেন্স
বার খেলে আমি কী না পারি?
হোক না আইন লাগু
করে লসাগু গসাগু
আমি হব সেরা মিলিটারি
তবু পথে, মোড়ে, বাঁকে
সংশয় পিছু ডাকে
মাস্টার অথবা কেরানি
যদি যায় ওয়ার্ল্ড ওয়ারে
নেতা কি না গিয়ে পারে?
সে তো আরও নিবেদিত প্রাণী!
শিক্ষিত, জবলেস
বাঁচাবে না তাকে দেশ
খালি পেটে গুলি সে না খেলে
নেতা তবে সাথে যাক
প‍্যারেডে ধমক খাক
দেখি-না, পা মেলে কি না মেলে

Wednesday, March 14, 2018

মারামারি

মারামারি
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেউ      আঁতে মারে
কেউ      ভাতে মারে
কেউ দিনে, কেউ মাঝরাতে মারে
খুনি       প্রাণে মারে
বাম       ডানে মারে
ডান ঠাস করে বাম কানে মারে
যারা      বিল-এ মারে
তিলে     তিলে মারে
চোর পুলিশে কখনও মিলে মারে
সাপ      বিষে মারে
ট্রাক      পিষে মারে
যারা হট তারা ফ্রেঞ্চ কিস-এ মারে

ভাগ‍্যিস ভালো আজও পাড়াপড়শিরা
শুধু মৃদু ফিসফিসে মারে

Monday, March 12, 2018

পার্থিব

পার্থিব
মুক্তিপ্রকাশ রায়

শিউলিফুল আমাকে ভয় দেখায় আজকাল
কাশফুল ভরসা দিতে থাকে

অধার্মিক ছেলের জন্য পুজো দেবে বলে
মা কখনও ... আর কক্ষনও মণ্ডপে যাবে না
অথচ ঝাপসা সহকর্মী ডেকে নেবেন
বাড়ির পুজোয়

মায়ের মৃত্যুর পর
আমাদের নবজন্ম হয়
মৃত্যু দক্ষ হাতে নাড়ি কেটে বলে
যা, সত‍্যিসত‍্যি চরে খা এবার

তখন পৃথিবীর ভয়ে আমরা কাঁদি
পৃথিবীই শেষমেশ রুমাল বাড়ায়

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#পার্থিব

Saturday, March 10, 2018

সাপলুডো

সাপলুডো
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কবিতা কি সাপলুডো?এত ওঠানামা!
মই? না কি সাপে খাবে?কী আছে কপালে!
জানে শুধু কাকাদেমি কে সোনা, কে তামা
গুলেবাঘ আছে কি না ভেড়াদের পালে

কোন কবি পোষ মানে জানে তা সাপুড়ে
কোন কবি ট্রাইবাল -- সাব-অলের ক্রেজ
কে মাচো সঙ্গী হবে উইক-এন্ড ট‍্যুরে
কবিতা ততটা ভালো যতটা ক্লিভেজ


আমি বৃথা মই খুঁজি, তেড়ে আসে সাপ
কবিতা পাহারা দেয় কবিতার বাপ


#মুক্তিপ্রকাশরায়
#সাপলুডো

Wednesday, March 7, 2018

বোধন

বোধন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

দুধের বালতিতে
এখনও ডুবে যায়
জীবনদাত্রীর কন‍্যাদায়
এখনও আগুনে বা
অ‍্যাসিড-অক্ষরে
শরীরে আঁকা থাকে পণ-আদায়
তবে যে কারা বলে
ভারত ডিজিটাল
দুয়ারে সমাগত আচ্ছে দিন!
সে-কথা মেনে নেব
পথে যে-নির্ভয়া
কাটাবে নির্ভয়ে রাত যেদিন
নয়তো বৃথা এই
মঞ্চ, চিৎকার,
ভিক্ষা, অনুদান, প্রীতি ও শোক
হাতে না ওঠে যদি
শূলাদি প্রহরণ
ক্রোধে না জ্বলে ওঠে
তৃতীয় চোখ

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#নারীদিবস

Wednesday, February 28, 2018

দোল:২০১৮

দোল:২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

শিমুলের রং টকটকে লাল
পলাশ একটু ফ‍্যাকাশে
বসন্ত জেগে কলেজের গেটে
একজাম, খাতা দেখা শেষ
হইহই করে দোল এসে গেল
মার্চের মাসপয়লা
কে ছিল, কে নেই, তবু দেখো সেই
আবীরে আবীরে ছয়লাপ
বোলপুর যাওয়া হয়নি, তবে হ‍্যাঁ
হলুদ শাড়িতে ঘরনি --
সেজে গালে ঠোনা মেরে বলে, বোকা
রবীন্দ্রনাথ পড়নি?
"দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া"
আজ দেখে চারিদিকে থ
এ-ঠোঁটে রুক্ষ খোয়াইয়ের মাটি
ও-চোখে শান্তিনিকেতন

#মুক্তিপ্রকাশরায়


Monday, February 26, 2018

প্রাপ‍্য

প্রাপ‍্য
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেউ চোখ মারে, কেউ বোম মারে, কেউ পয়সা
বেশি লাই পেলে নাকি কৃমিকীট শেষে হয় সাপ
সে ছোবল মারে যার ওঝাদের সাথে দোস্তি
সব জেনেশুনে যারা জাদুয়ি চিরাগ ঘষতিস
তারা ভেবে দেখ আজ আটকাবি কীসে জিন-কে
যথা ট্রাম্প বা আসাদ, আইএস, আচ্ছে দিনকে
জনগণ পায় তার যেমন শাসক প্রাপ‍্য
গালে মৃত শিশু দেয় নিয়তির মতো থাপ্পড়

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Monday, February 12, 2018

কিস-ডে

কিস-ডে: ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কিসে কী যায় আসে, কীসে কী হয়
যদিও দেশ কিষ্কিন্ধ‍্যা নয়
কিসের কিসমতে তবুও চাপ
বাঁদরে লাফ দেবে, বসাবে খাপ
কিসের পক্ষে বা বলি কী আর
না এটা আমেরিকা, না লিপ ইয়ার
কিসে কি পেট ভরে? উপোসি দেশ
কীভাবে কিসে করি মনোনিবেশ!
এ ঠোঁট ফ‍্যাসিবাদী, ও ঠোঁটে বাম
মাঝে কি কাশ্মীর? না ডোকলাম?
ঠোঁটের সীমানায় দাঁড়িয়ে ঠোঁট
তুমি কি মেনে নেবে তৃতীয় জোট?

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#কিস_ডে
#Kiss_Day

হাগ-ডে

হাগ-ডে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আমাদের কৈশোর
যেন দূর অতীতে
টিউশনে পাশে বসা
চোরা অনুমতিতে
কথা চালাচালি হলে
মনে হত ক্রাইম এ
সাজনের গান যেন
ভজনের টাইমে
অঙ্কের বই খুলে
বলেছিলি, দাগ দে
সেই দাগ রয়ে গেল
কেটে গেল হাগ-ডে

কখনও সত‍্যি বলি
কিছু গুলতাপ্পি
তখন কি ছিল ছাই
এ জাদুর ঝাপ্পি?
হাঁটুতে ঠেকলে হাঁটু
দুজনেই নি-হত
বেহাগ জীবনে হাগ
হলে তবে কী হত?
পাড়াতে বেরোত ফেউ
বাড়িতেও বাঘ ঢের
আঙুল সাক্ষী শুধু
আমাদের হাগ ডে-র

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#হাগ_ডে
#Hug_Day

Wednesday, January 31, 2018

জাস্ট স্বপ্ন

জাস্ট স্বপ্ন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মা-কে স্বপ্নে দেখলাম কাল।

যদিও তখনও হাসপাতালে, তবুও জানা গেল মায়ের অসুখ সেরে যাচ্ছে। আর কয়েকদিন হাসপাতালে থাকলেই এক্কেবারে সেরে যাবে। সৌম্য চেহারার এক ডাক্তারবাবু বললেন, শুধু কমলালেবুটা খাবেন না কিছুদিন, তাহলেই ...

এত সহজ? শুধু কমলালেবু না খেলেই হবে? এভাবেই সেরে যাবে ক‍্যানসার? থার্ড স্টেজ বলেছিলেন যে! কে যেন আবার বলেছিলেন -- মেটাস্ট‍্যাসিস হয়ে গেছে! সেই অনামুখো ডাক্তারের টিকিটিও ধারেকাছে দেখা গেল না।

তবে, ব্রেস্ট ক্যানসারের সঙ্গে কমলালেবুর সম্পর্ক কী তা আমিও ঠিক বুঝলাম না। তবে তাতে মায়ের তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মা তো আম ভালোবাসে। বরং আমার কিছুটা কমলালেবুর প্রতি  হ‍্যাংলামো আছে। লোকাল ট্রেনে কমলালেবু কিনে, একেকটা কোয়া মুখে ফেলে চুষতে চুষতে, আমি বহুবার যাত্রাপথের একাকিত্ব সহনীয় করে তুলেছি।

হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিল মা। অসুখ-অসুখ ভাবটা মুখ থেকে উধাও হয়েছে একদম। লম্বা চুল একমাথা। কেমো নেওয়ার পর আবার যখন চুল বেরিয়েছিল, মাকে কেমন যেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের মতো দেখাত। এখন আবার লম্বা চুলে সেই আগের মা। তবে মা দেখলাম কাঁদছে।
-কাঁদছ কেন মা? আমি জিজ্ঞেস করলাম -- সব তো ঠিক হয়ে গেল। আর চিন্তা কী? বাড়ি চলে যাব তো এবার। ওই কমলালেবুটুকু না খেলেই ...

মা বলল, কী কপাল দেখ অতটুকু মেয়ের!

পাশের বেডে একটা বাচ্চা মেয়ে শুয়ে ছিল। বছর পাঁচেক বয়স। কেমোথেরাপি মুছে নিয়েছে মাথার চুল। তার নাকি গলায় ক‍্যানসার। কিচ্ছু খেতে পারে না। নেতিয়ে পড়ে আছে বিছানার এক কোণে।

-আমি সেরে না উঠে যদি ওই মেয়েটা ভালো হয়ে যেত!-- স্থির দৃষ্টিতে মা তাকিয়ে ছিল মেয়েটার দিকে।
-তোমার যত অলক্ষুনে কথা! --এই বলে মায়ের মুখ চেপে ধরলাম আমি। আর তখনই ...
তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল।

বাড়ির পাশের মাঠে স্পোর্টস। প্রাইমারি স্কুলের বিচ্ছুগুলো জড়ো হয়ে গেছে সকাল থেকেই। মাইকে শুরু হয়েছে হাঁকডাক। একটা ছুটির দিনে মানুষ যে শান্তি করে একটু বেলা অবধি ঘুমোবে, তার জো আছে?

চায়ের কাপ হাতে দাঁড়ালাম গিয়ে বারান্দায়। সামনের মাঠে রঙের ছড়াছড়ি। টিফিন আর চেস্ট-নাম্বার বিলি হচ্ছে এখন। বিশেষ করে নজর গেল একটা বাচ্চা মেয়ের দিকে।

একমাথা কোঁকড়া কালো চুল।
গোটা মাঠ জুড়ে ছোটাছুটি করছে শীতের রোদ্দুরে।
তার হাতের মুঠোয় যেন গোটা একটা পৃথিবী।

একটা কমলালেবু।

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, January 23, 2018

টেনস-অন

টেনস-অন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

এখনকার সরকারি ইস্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ‍্যব‍্যবস্থার কিছুটা মিল আছে। দুটিরই সাধারণ ধর্ম -- সিগনিফায়ার আর সিগনিফায়েডের দ্বন্দ্ব। যেমন এখন ডাক্তারবাবু 'অজানা জ্বর' বললে সেটা 'ডেঙ্গি'র ইউফেমিজম বুঝতে হয়, তেমনই উচ্চমাধ‍্যমিকে ইংরেজিতে আশি পেলেও শিক্ষার্থী ম্লেচ্ছ ভাষায় সদ‍্য-সাক্ষর বই কিছু নয় বলেই ধরা ভালো (ব‍্যাপারটা অন‍্যান‍্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ‍্য হতে পারে)। অন্তত আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরই ওই দশা। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের গজদন্তমিনারে বসে যাঁরা পাঠ‍্যক্রম নিয়ে গবেষণা করেন (যাতে গ্রামেগ্রামে কেমব্রিজনিন্দিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা যায়), তাঁরা গ্রামের অধ‍্যাপকের দায়িত্বদুরূহতা কল্পনা করতে পারবেন না।
     আমার কলেজে উচ্চমাধ‍্যমিক প্রহসনে ইংরেজিতে আশি-পাওয়া ছাত্রছাত্রীর অধিকাংশই টেনস-টুকুও জানে না। টেমসের তো নামই শোনেনি। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে-- এ-হেন ছাত্রছাত্রীর ইংলিশ অনার্স পড়ার দরকার কী; বা ইস্কুলে যে কিছু শিখে উঠতে পারেনি, তার কলেজে ভরতি হওয়ার উপযোগিতা কোথায়। সরকার আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মতো উচ্চশিক্ষাকেও সর্বজনীন করে তুলতে উদ‍্যোগী; এ তারই ফল। তবে তা না করলে এতগুলো কলেজও তৈরি হত না, আর আমাদের মতো অভাগার অন্নসংস্থানও হত না। এতজনকে বি.এ. পাস করানোর পুণ‍্যেই যে নিজে শেষপর্যন্ত বিয়ে পাস করতে পেরেছি, তাতে সন্দেহ নেই।
     কৃতজ্ঞতাবশত দায়িত্বজ্ঞানের হদ্দমুদ্দ দেখিয়ে আমি মাঝেমাঝে ছানাদের টেনস, ট্রানস্লেশন ইত‍্যাদি অবসরমতো শেখাতে চেষ্টা করি; যাতে বিদেশি সাহিত‍্যসাগরে তাদের (ডগপ‍্যাডেলিং করে অন্তত) প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়। আগে তো শুদ্ধ ইংরেজিটা লিখতে শিখুক, তারপর নাহয় শেক্ষপিরের দরগায় সিন্নি চড়ানো যাবে -- ঈদৃশ ভাবনায় চালিত হয়ে আমি প্রত‍্যেক বছরই ছাত্রছাত্রীর জন‍্য টেনস-অন করে থাকি। এরকমই এক সমাজসেবার গপ্পো বলি।
     একটি মেয়ে, যে কিনা ইংরেজিতে উচ্চমাধ‍্যমিকের দানসত্রে অত‍্যুচ্চ নম্বর বাগিয়েছে, আমাকে টেনস শেখানোর ক্লাসে হরিণশিশুর সারল‍্যমেশানো বড়োবড়ো চোখ মেলে প্রশ্ন করল -- পার্সন ব‍্যাপারটা কী?
     এখন পার্সন না বুঝলে সিম্পল প্রেজেন্ট টেনসে থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারের ভার্বে যে s/es যোগ করতে হবে সেটি মাথায় ঢুকবে না। তাই অনেক কুস্তি করে ব‍্যাপারটা বোঝানো হল। মানে, যতটা সরল করে সম্ভব আর কী। পরীক্ষা করার জন‍্য একটা ট্রানস্লেশন দেওয়া গেল -- শিল্পা স্কুলে যায়।
- Shilpa go to school, মেয়েটির তুরন্ত জবাব।

যারপরনাই ফ্রাস্টু খেয়ে ফুঁসে ওঠা আটকানো গেল না, এই যে এত শেখালুম! তাও 'গো' বললি? এত 'গোঁ' তোর? 'Goes' হবে না?

মেয়েটিও ক্ষুব্ধ, আপনিই তো বললেন -- 'আমি/তুমি' এসব হলে s/es হবে না!

আমি/তুমি পাচ্ছিস কোথায় তুই? --আমি অবাক। বললুম তো 'শিল্পা স্কুলে যায়'!

মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, ও মা! শিল্পা তো আমারই নাম! ওটা তো আমিই! তাহলে ঠিকাছে তো স‍্যার?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

তেইশে জানুয়ারি ২০১৮

তেইশে জানুয়ারি ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

অ্যানিমিক, তাই রক্ত দেওয়াটা রিস্কি
RBC কম, শুধু জল-সোডা-হুইস্কি
বাধবে ঝামেলা তুমি ফিরে এলে
এলেবেলে যত আজ A level-এ
বাঙালি এখন বিস্কুট খেলে বলে, আহা ওটা 'বিস্কিট'

বুকে দম নেই , কদম বাড়াব কী করে?
কী ফুল ফোটাব? সারজল নেই শিকড়ে
স্ট‍্যাচু বানালেও কাকে হেগে দেবে
ফ‍্যাসিবাদী বলে কেউ দেগে দেবে
সব তরুণের স্বপ্ন -- কে দেবে ইন্টারনেট ফ্রি করে


Sunday, January 21, 2018

সরস্বতীপুজো: ২০১৮

সরস্বতীপুজো: ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আগে টিনটিন ছিল
আর আলাদিন ছিল
তারপরে মা তোমার
কাছে কিছু ঋণ ছিল

ডান্সে নাগিন ছিল
ব্লু ডেনিম জিনস ছিল
গরম খিচুড়ি ছিল
তাতে সয়‍্যাবিন ছিল

ভিড়ে চোখ চিনছিল
বুকে চিনচিন ছিল
হলুদ শাড়িরা পথে
টোপাকুল কিনছিল

আমাদেরও দিন ছিল
"ডোন্ট মেক আ সিন" ছিল
"আই লাভ য়‍্যু"-র পরে
"হোয়াট ডু য়‍্যু মিন?" ছিল

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, January 16, 2018

কিম্ভূত

কিম্ভূত
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেন তুই মোটা এত?
কেন তুই কঞ্চি?
কেন তোর ব্রেনে ঠাসা
বালি আর স্টোন-চিপ?
কেন তুই হাত-খোলা?
কেন তুই কঞ্জুস?
কী খেয়ে লম্বা হলি
কী টনিক? কোন জুস?
মার্কেটে এতকিছু
দুধ, সাবু, বার্লি
তাও তুই কোন মুখে
বেঁটে হতে পারলি!
কেন তুই মালাউন?
কেন তুই ম্লেচ্ছ?
সর্বদা তোর গায়ে
কেন ও-দলের ছোপ?
কেন তুই কালো এত?
শ্বেতি কেন চিবুকে?
আয় ব‍্যাটা কিম্ভূত
স্ট‍্যাম্প মেরে দি বুকে
পারফেক্ট দুনিয়ায়
এত কেন খুঁত তোর?
কে বাঁচাবে? কে জোগাবে
শো-কজের উত্তর?


#মুক্তিপ্রকাশরায়

Friday, January 12, 2018

আপৎকালীন

আপৎকালীন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

(ছন্দসূত্র মূলত: ড‍্যাংডা ড‍্যাঙাড‍্যাং ড‍্যাংডা ড‍্যাং)

কোনটা প্রতিবাদ, কোনটা তেল
ডান পা চাটে কি না বাম আঁতেল
কে মাওবাদী আর কে সম্পদ
কে বদ, তবু অতি বশংবদ্
সিনেমা হলে খাড়া দেশপ্রেম--
কে জানে ঢেকে রাখে কী প্রবলেম
কারা যে ঘুষ খায়, কে ননভেজ
বাতাসে কারা শোঁকে  বিফ, সসেজ
কাকে যে ভয় করি -- পাক না চিন
প্রশ্ন             ফুটে ওঠে
প্রশ্ন             উথলোয়
ঢাকনা দিন, দাদা, ঢাকনা দিন

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Monday, January 8, 2018

আশিকি ২০১৮

আশিকি ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আজও ওড়ে চিল, পাথুরে পাঁচিল, হিংসুটে চোখ পাহারায়
তাও সবখানে প্রেমিকেরা জানে, জব তুম আও বাহার আয়ে
একে টাকা নেই, মামা-কাকা নেই, তায় দুশমন জমানা
তোরও বহু গুণ, অ্যাটিলা দ‍্য হুন, শুধু রাগ আছে, ক্ষমা নাই
টেলিফোন নেই; পড়ি, মন নেই; ধরেবেঁধে দিবি ফাঁসি কি?
লাভ কী বা তোর ছুড়ে পাত্থর, বদনাম করে আশিকি-র?
কার সাথে গেলি, ঝুমকা গিরালি কোন বরেলির বাজারে
সব কিছু ক্ষমা করে প্রিয়তমা আমি জিসাস অব নাজারেথ
চিকনি চামেলি, ফ্লার্ট করে গেলি,  বদনাম হল মুন্না
কাঁটা পেতে শুই, ভেবে বল তুই, এও কি আসলে খুন না?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

ভাগ‍্যিস

ভাগ‍্যিস
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভাগ‍্যিস গায়ে লোম কিছু বেশি
বউ বলে, যেন গোরিলা
নইলে এ-শীতে গা ঘামাতে চাই
কুস্তি, জগিং, দড়িলাফ
অত হুজ্জতি ভালো লাগে কারও
সুস্থ শরীরে খামখা?
বাবা কিনে দেয় হনুমান টুপি
বন্ধুরা বলে, রাম খা
বজরং টুপি দেখে শালি হাসে
রাম দেখে কাড়ে রা বোনও
চানের সময় কেঁপে উঠি যেন
বালতিতে মহাপ্লাবন ও
ঘায়ের ওপর প্রলেপের মতো
লেপ এসেছিল বিয়েতে
রাতে লেপ কেড়ে লেপের মালিক
যেন ছুরি মারে ইয়ে-তে
পণপ্রথা জানি অভিশাপ, তাই
মৃদু হেসে বলি, পাগলি!
এত রাত্তিরে পোষাবে এ-দুটো
স্নো-বল সমেত জাগলিং?
নই আমি কোনও মেরুভল্লুক,
সিলমাছও নই, স‍্যান্টাও
মারবিই যদি, তিলে তিলে কেন
অন করে দে-না ফ‍্যানটাও
এ-শীতও আমার বশ মেনে গেছে
সাপ যেরকম সাপুড়ের
ভাগ‍্যিস গায়ে লোম কিছু বেশি
যেমন অনিল কাপুরের

#মুক্তিপ্রকাশরায়