Tuesday, January 23, 2018

টেনস-অন

টেনস-অন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

এখনকার সরকারি ইস্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ‍্যব‍্যবস্থার কিছুটা মিল আছে। দুটিরই সাধারণ ধর্ম -- সিগনিফায়ার আর সিগনিফায়েডের দ্বন্দ্ব। যেমন এখন ডাক্তারবাবু 'অজানা জ্বর' বললে সেটা 'ডেঙ্গি'র ইউফেমিজম বুঝতে হয়, তেমনই উচ্চমাধ‍্যমিকে ইংরেজিতে আশি পেলেও শিক্ষার্থী ম্লেচ্ছ ভাষায় সদ‍্য-সাক্ষর বই কিছু নয় বলেই ধরা ভালো (ব‍্যাপারটা অন‍্যান‍্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ‍্য হতে পারে)। অন্তত আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরই ওই দশা। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের গজদন্তমিনারে বসে যাঁরা পাঠ‍্যক্রম নিয়ে গবেষণা করেন (যাতে গ্রামেগ্রামে কেমব্রিজনিন্দিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা যায়), তাঁরা গ্রামের অধ‍্যাপকের দায়িত্বদুরূহতা কল্পনা করতে পারবেন না।
     আমার কলেজে উচ্চমাধ‍্যমিক প্রহসনে ইংরেজিতে আশি-পাওয়া ছাত্রছাত্রীর অধিকাংশই টেনস-টুকুও জানে না। টেমসের তো নামই শোনেনি। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে-- এ-হেন ছাত্রছাত্রীর ইংলিশ অনার্স পড়ার দরকার কী; বা ইস্কুলে যে কিছু শিখে উঠতে পারেনি, তার কলেজে ভরতি হওয়ার উপযোগিতা কোথায়। সরকার আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মতো উচ্চশিক্ষাকেও সর্বজনীন করে তুলতে উদ‍্যোগী; এ তারই ফল। তবে তা না করলে এতগুলো কলেজও তৈরি হত না, আর আমাদের মতো অভাগার অন্নসংস্থানও হত না। এতজনকে বি.এ. পাস করানোর পুণ‍্যেই যে নিজে শেষপর্যন্ত বিয়ে পাস করতে পেরেছি, তাতে সন্দেহ নেই।
     কৃতজ্ঞতাবশত দায়িত্বজ্ঞানের হদ্দমুদ্দ দেখিয়ে আমি মাঝেমাঝে ছানাদের টেনস, ট্রানস্লেশন ইত‍্যাদি অবসরমতো শেখাতে চেষ্টা করি; যাতে বিদেশি সাহিত‍্যসাগরে তাদের (ডগপ‍্যাডেলিং করে অন্তত) প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়। আগে তো শুদ্ধ ইংরেজিটা লিখতে শিখুক, তারপর নাহয় শেক্ষপিরের দরগায় সিন্নি চড়ানো যাবে -- ঈদৃশ ভাবনায় চালিত হয়ে আমি প্রত‍্যেক বছরই ছাত্রছাত্রীর জন‍্য টেনস-অন করে থাকি। এরকমই এক সমাজসেবার গপ্পো বলি।
     একটি মেয়ে, যে কিনা ইংরেজিতে উচ্চমাধ‍্যমিকের দানসত্রে অত‍্যুচ্চ নম্বর বাগিয়েছে, আমাকে টেনস শেখানোর ক্লাসে হরিণশিশুর সারল‍্যমেশানো বড়োবড়ো চোখ মেলে প্রশ্ন করল -- পার্সন ব‍্যাপারটা কী?
     এখন পার্সন না বুঝলে সিম্পল প্রেজেন্ট টেনসে থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারের ভার্বে যে s/es যোগ করতে হবে সেটি মাথায় ঢুকবে না। তাই অনেক কুস্তি করে ব‍্যাপারটা বোঝানো হল। মানে, যতটা সরল করে সম্ভব আর কী। পরীক্ষা করার জন‍্য একটা ট্রানস্লেশন দেওয়া গেল -- শিল্পা স্কুলে যায়।
- Shilpa go to school, মেয়েটির তুরন্ত জবাব।

যারপরনাই ফ্রাস্টু খেয়ে ফুঁসে ওঠা আটকানো গেল না, এই যে এত শেখালুম! তাও 'গো' বললি? এত 'গোঁ' তোর? 'Goes' হবে না?

মেয়েটিও ক্ষুব্ধ, আপনিই তো বললেন -- 'আমি/তুমি' এসব হলে s/es হবে না!

আমি/তুমি পাচ্ছিস কোথায় তুই? --আমি অবাক। বললুম তো 'শিল্পা স্কুলে যায়'!

মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, ও মা! শিল্পা তো আমারই নাম! ওটা তো আমিই! তাহলে ঠিকাছে তো স‍্যার?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

No comments: