Showing posts with label #মুক্তিপ্রকাশরায়. Show all posts
Showing posts with label #মুক্তিপ্রকাশরায়. Show all posts

Wednesday, April 4, 2018

ভোট এলে

ভোট এলে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভোট আসে মাঝেমাঝে
আমাদের পাড়াতে
কেউ বাঁধে বোমা, কেউ
শান দেয় খাঁড়াতে
কেউ চায় ঝাড়পিট
কেউ তার বিরোধী
কেউ চায় -- যারা আছে
তারা থাক চিরদিন
টেনশনে রাত জাগে
সরকারি চাকুরে
ফেঁসে গিয়ে নিজ হাতে
এ-কবরটা খুঁড়ে
লাভ কী বা এই সাদা
কলারের মাঞ্জায়
ভোটে যদি ঘোঁট পাকে?
চোট লেগে প্রাণ যায়?
গণতান্ত্রিক দেশে
একনলা দোনলা
ভোট দেয়, ভোট নেয়
কোথাও বা কোনও লাশ
অপলক চোখে দ‍্যাখে
এ-পাড়া ও-পাড়াতে
সিসে হয়ে ঢুকে যায়
ভোট শিরদাঁড়াতে





Wednesday, March 7, 2018

বোধন

বোধন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

দুধের বালতিতে
এখনও ডুবে যায়
জীবনদাত্রীর কন‍্যাদায়
এখনও আগুনে বা
অ‍্যাসিড-অক্ষরে
শরীরে আঁকা থাকে পণ-আদায়
তবে যে কারা বলে
ভারত ডিজিটাল
দুয়ারে সমাগত আচ্ছে দিন!
সে-কথা মেনে নেব
পথে যে-নির্ভয়া
কাটাবে নির্ভয়ে রাত যেদিন
নয়তো বৃথা এই
মঞ্চ, চিৎকার,
ভিক্ষা, অনুদান, প্রীতি ও শোক
হাতে না ওঠে যদি
শূলাদি প্রহরণ
ক্রোধে না জ্বলে ওঠে
তৃতীয় চোখ

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#নারীদিবস

Monday, February 12, 2018

কিস-ডে

কিস-ডে: ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কিসে কী যায় আসে, কীসে কী হয়
যদিও দেশ কিষ্কিন্ধ‍্যা নয়
কিসের কিসমতে তবুও চাপ
বাঁদরে লাফ দেবে, বসাবে খাপ
কিসের পক্ষে বা বলি কী আর
না এটা আমেরিকা, না লিপ ইয়ার
কিসে কি পেট ভরে? উপোসি দেশ
কীভাবে কিসে করি মনোনিবেশ!
এ ঠোঁট ফ‍্যাসিবাদী, ও ঠোঁটে বাম
মাঝে কি কাশ্মীর? না ডোকলাম?
ঠোঁটের সীমানায় দাঁড়িয়ে ঠোঁট
তুমি কি মেনে নেবে তৃতীয় জোট?

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#কিস_ডে
#Kiss_Day

হাগ-ডে

হাগ-ডে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আমাদের কৈশোর
যেন দূর অতীতে
টিউশনে পাশে বসা
চোরা অনুমতিতে
কথা চালাচালি হলে
মনে হত ক্রাইম এ
সাজনের গান যেন
ভজনের টাইমে
অঙ্কের বই খুলে
বলেছিলি, দাগ দে
সেই দাগ রয়ে গেল
কেটে গেল হাগ-ডে

কখনও সত‍্যি বলি
কিছু গুলতাপ্পি
তখন কি ছিল ছাই
এ জাদুর ঝাপ্পি?
হাঁটুতে ঠেকলে হাঁটু
দুজনেই নি-হত
বেহাগ জীবনে হাগ
হলে তবে কী হত?
পাড়াতে বেরোত ফেউ
বাড়িতেও বাঘ ঢের
আঙুল সাক্ষী শুধু
আমাদের হাগ ডে-র

#মুক্তিপ্রকাশরায়
#হাগ_ডে
#Hug_Day

Tuesday, January 23, 2018

টেনস-অন

টেনস-অন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

এখনকার সরকারি ইস্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে সরকারি স্বাস্থ‍্যব‍্যবস্থার কিছুটা মিল আছে। দুটিরই সাধারণ ধর্ম -- সিগনিফায়ার আর সিগনিফায়েডের দ্বন্দ্ব। যেমন এখন ডাক্তারবাবু 'অজানা জ্বর' বললে সেটা 'ডেঙ্গি'র ইউফেমিজম বুঝতে হয়, তেমনই উচ্চমাধ‍্যমিকে ইংরেজিতে আশি পেলেও শিক্ষার্থী ম্লেচ্ছ ভাষায় সদ‍্য-সাক্ষর বই কিছু নয় বলেই ধরা ভালো (ব‍্যাপারটা অন‍্যান‍্য বিষয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ‍্য হতে পারে)। অন্তত আমাদের এলাকায় বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরই ওই দশা। বিশ্ববিদ‍্যালয়ের গজদন্তমিনারে বসে যাঁরা পাঠ‍্যক্রম নিয়ে গবেষণা করেন (যাতে গ্রামেগ্রামে কেমব্রিজনিন্দিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা যায়), তাঁরা গ্রামের অধ‍্যাপকের দায়িত্বদুরূহতা কল্পনা করতে পারবেন না।
     আমার কলেজে উচ্চমাধ‍্যমিক প্রহসনে ইংরেজিতে আশি-পাওয়া ছাত্রছাত্রীর অধিকাংশই টেনস-টুকুও জানে না। টেমসের তো নামই শোনেনি। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে-- এ-হেন ছাত্রছাত্রীর ইংলিশ অনার্স পড়ার দরকার কী; বা ইস্কুলে যে কিছু শিখে উঠতে পারেনি, তার কলেজে ভরতি হওয়ার উপযোগিতা কোথায়। সরকার আসলে প্রাথমিক শিক্ষার মতো উচ্চশিক্ষাকেও সর্বজনীন করে তুলতে উদ‍্যোগী; এ তারই ফল। তবে তা না করলে এতগুলো কলেজও তৈরি হত না, আর আমাদের মতো অভাগার অন্নসংস্থানও হত না। এতজনকে বি.এ. পাস করানোর পুণ‍্যেই যে নিজে শেষপর্যন্ত বিয়ে পাস করতে পেরেছি, তাতে সন্দেহ নেই।
     কৃতজ্ঞতাবশত দায়িত্বজ্ঞানের হদ্দমুদ্দ দেখিয়ে আমি মাঝেমাঝে ছানাদের টেনস, ট্রানস্লেশন ইত‍্যাদি অবসরমতো শেখাতে চেষ্টা করি; যাতে বিদেশি সাহিত‍্যসাগরে তাদের (ডগপ‍্যাডেলিং করে অন্তত) প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়। আগে তো শুদ্ধ ইংরেজিটা লিখতে শিখুক, তারপর নাহয় শেক্ষপিরের দরগায় সিন্নি চড়ানো যাবে -- ঈদৃশ ভাবনায় চালিত হয়ে আমি প্রত‍্যেক বছরই ছাত্রছাত্রীর জন‍্য টেনস-অন করে থাকি। এরকমই এক সমাজসেবার গপ্পো বলি।
     একটি মেয়ে, যে কিনা ইংরেজিতে উচ্চমাধ‍্যমিকের দানসত্রে অত‍্যুচ্চ নম্বর বাগিয়েছে, আমাকে টেনস শেখানোর ক্লাসে হরিণশিশুর সারল‍্যমেশানো বড়োবড়ো চোখ মেলে প্রশ্ন করল -- পার্সন ব‍্যাপারটা কী?
     এখন পার্সন না বুঝলে সিম্পল প্রেজেন্ট টেনসে থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বারের ভার্বে যে s/es যোগ করতে হবে সেটি মাথায় ঢুকবে না। তাই অনেক কুস্তি করে ব‍্যাপারটা বোঝানো হল। মানে, যতটা সরল করে সম্ভব আর কী। পরীক্ষা করার জন‍্য একটা ট্রানস্লেশন দেওয়া গেল -- শিল্পা স্কুলে যায়।
- Shilpa go to school, মেয়েটির তুরন্ত জবাব।

যারপরনাই ফ্রাস্টু খেয়ে ফুঁসে ওঠা আটকানো গেল না, এই যে এত শেখালুম! তাও 'গো' বললি? এত 'গোঁ' তোর? 'Goes' হবে না?

মেয়েটিও ক্ষুব্ধ, আপনিই তো বললেন -- 'আমি/তুমি' এসব হলে s/es হবে না!

আমি/তুমি পাচ্ছিস কোথায় তুই? --আমি অবাক। বললুম তো 'শিল্পা স্কুলে যায়'!

মেয়েটি মিষ্টি হেসে বলল, ও মা! শিল্পা তো আমারই নাম! ওটা তো আমিই! তাহলে ঠিকাছে তো স‍্যার?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Sunday, January 21, 2018

সরস্বতীপুজো: ২০১৮

সরস্বতীপুজো: ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আগে টিনটিন ছিল
আর আলাদিন ছিল
তারপরে মা তোমার
কাছে কিছু ঋণ ছিল

ডান্সে নাগিন ছিল
ব্লু ডেনিম জিনস ছিল
গরম খিচুড়ি ছিল
তাতে সয়‍্যাবিন ছিল

ভিড়ে চোখ চিনছিল
বুকে চিনচিন ছিল
হলুদ শাড়িরা পথে
টোপাকুল কিনছিল

আমাদেরও দিন ছিল
"ডোন্ট মেক আ সিন" ছিল
"আই লাভ য়‍্যু"-র পরে
"হোয়াট ডু য়‍্যু মিন?" ছিল

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, January 16, 2018

কিম্ভূত

কিম্ভূত
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেন তুই মোটা এত?
কেন তুই কঞ্চি?
কেন তোর ব্রেনে ঠাসা
বালি আর স্টোন-চিপ?
কেন তুই হাত-খোলা?
কেন তুই কঞ্জুস?
কী খেয়ে লম্বা হলি
কী টনিক? কোন জুস?
মার্কেটে এতকিছু
দুধ, সাবু, বার্লি
তাও তুই কোন মুখে
বেঁটে হতে পারলি!
কেন তুই মালাউন?
কেন তুই ম্লেচ্ছ?
সর্বদা তোর গায়ে
কেন ও-দলের ছোপ?
কেন তুই কালো এত?
শ্বেতি কেন চিবুকে?
আয় ব‍্যাটা কিম্ভূত
স্ট‍্যাম্প মেরে দি বুকে
পারফেক্ট দুনিয়ায়
এত কেন খুঁত তোর?
কে বাঁচাবে? কে জোগাবে
শো-কজের উত্তর?


#মুক্তিপ্রকাশরায়

Friday, January 12, 2018

আপৎকালীন

আপৎকালীন
মুক্তিপ্রকাশ রায়

(ছন্দসূত্র মূলত: ড‍্যাংডা ড‍্যাঙাড‍্যাং ড‍্যাংডা ড‍্যাং)

কোনটা প্রতিবাদ, কোনটা তেল
ডান পা চাটে কি না বাম আঁতেল
কে মাওবাদী আর কে সম্পদ
কে বদ, তবু অতি বশংবদ্
সিনেমা হলে খাড়া দেশপ্রেম--
কে জানে ঢেকে রাখে কী প্রবলেম
কারা যে ঘুষ খায়, কে ননভেজ
বাতাসে কারা শোঁকে  বিফ, সসেজ
কাকে যে ভয় করি -- পাক না চিন
প্রশ্ন             ফুটে ওঠে
প্রশ্ন             উথলোয়
ঢাকনা দিন, দাদা, ঢাকনা দিন

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Monday, January 8, 2018

আশিকি ২০১৮

আশিকি ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

আজও ওড়ে চিল, পাথুরে পাঁচিল, হিংসুটে চোখ পাহারায়
তাও সবখানে প্রেমিকেরা জানে, জব তুম আও বাহার আয়ে
একে টাকা নেই, মামা-কাকা নেই, তায় দুশমন জমানা
তোরও বহু গুণ, অ্যাটিলা দ‍্য হুন, শুধু রাগ আছে, ক্ষমা নাই
টেলিফোন নেই; পড়ি, মন নেই; ধরেবেঁধে দিবি ফাঁসি কি?
লাভ কী বা তোর ছুড়ে পাত্থর, বদনাম করে আশিকি-র?
কার সাথে গেলি, ঝুমকা গিরালি কোন বরেলির বাজারে
সব কিছু ক্ষমা করে প্রিয়তমা আমি জিসাস অব নাজারেথ
চিকনি চামেলি, ফ্লার্ট করে গেলি,  বদনাম হল মুন্না
কাঁটা পেতে শুই, ভেবে বল তুই, এও কি আসলে খুন না?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

ভাগ‍্যিস

ভাগ‍্যিস
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভাগ‍্যিস গায়ে লোম কিছু বেশি
বউ বলে, যেন গোরিলা
নইলে এ-শীতে গা ঘামাতে চাই
কুস্তি, জগিং, দড়িলাফ
অত হুজ্জতি ভালো লাগে কারও
সুস্থ শরীরে খামখা?
বাবা কিনে দেয় হনুমান টুপি
বন্ধুরা বলে, রাম খা
বজরং টুপি দেখে শালি হাসে
রাম দেখে কাড়ে রা বোনও
চানের সময় কেঁপে উঠি যেন
বালতিতে মহাপ্লাবন ও
ঘায়ের ওপর প্রলেপের মতো
লেপ এসেছিল বিয়েতে
রাতে লেপ কেড়ে লেপের মালিক
যেন ছুরি মারে ইয়ে-তে
পণপ্রথা জানি অভিশাপ, তাই
মৃদু হেসে বলি, পাগলি!
এত রাত্তিরে পোষাবে এ-দুটো
স্নো-বল সমেত জাগলিং?
নই আমি কোনও মেরুভল্লুক,
সিলমাছও নই, স‍্যান্টাও
মারবিই যদি, তিলে তিলে কেন
অন করে দে-না ফ‍্যানটাও
এ-শীতও আমার বশ মেনে গেছে
সাপ যেরকম সাপুড়ের
ভাগ‍্যিস গায়ে লোম কিছু বেশি
যেমন অনিল কাপুরের

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Friday, December 29, 2017

নতুন বছরের ছড়া: ২০১৮

নতুন বছরের ছড়া: ২০১৮
মুক্তিপ্রকাশ রায়

ভোর হোক, আলো হোক
চুলো হোক, চালও হোক
সাঁওতাল বেঁচে থাক
পাশে জিন্দালও হোক

সতেরোর ভুলগুলো
আঠারোয় ঠিক হোক
হাতে হাত ঠেকে গেলে
পুরোনো ম‍্যাজিক হোক

প্রেম হোক, ইয়ে হোক
চাকুরের ডিএ হোক
আইবুড়ো কবিদের
আঠারোয় বিয়ে হোক

মোড়ে মোড়ে চপও হোক
ঘরে ঘরে জবও হোক
যাদবপুরের মোড়ে
'হোক কলরব'ও হোক

ভয়টয় দূর হোক
যার শুধু পাউরুটি
       তার ঝোলাগুড় হোক
বিভেদ-কুকুর এলে
তেমনই মুগুর হোক

পৃথিবীর ভালো হোক
কম জঞ্জালও হোক
      ফেয়ার-অ্যান্ড লাভলি-কে
      না কিনুক পাবলিকে
কালো মানুষেরা মাথা
উঁচু করে কালো হোক

#মুক্তিপ্রকাশরায়


কবির মৃত‍্যু

কবির মৃত‍্যু
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কেউ খালি পা-য়, কেউ তালি পায়
কেউ কাল-ই পায় বুঝি জ্ঞানপীঠ
মোছা কারও গদি, নয় স্ববিরোধী
মমতা বা মোদি কারও দেন পিঠ--
চাপড়িয়ে তাই বাড়ে ইয়েটাই
শুধু ডিএটাই নাকি লাট খায়
কেউ বিপ্লবী, কারও deep love-ই
তাঁকে cheap কবি হতে আটকায়
কেউ লোভী তাও, ছাপা ছবিটাও--
চায়, কবিতাও উপলক্ষ‍্য
পেলে এডিটার, তেল রেডি তার
পোষা টেডিটার মতো সখ‍্য
পাতা ঝরে যাক, শ্রোতা সরে যাক
পাশে মরে যাক কেউ স্টেজেতে
সে তো হেরো, ছাড়, তাকে করে বার
কারা হারে আর দেখি কে জেতে

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Sunday, December 24, 2017

বড়দিন ২০১৭

বড়দিন ২০১৭
মুক্তিপ্রকাশ রায়

কিছু লেগে থাকে কাঁটার মুকুটে
কিছু লেগে থাকে পেরেকে
কেউ বলে, কিছু স্নো-ফলে রাখিস
ফাটা ঠোঁটে কিছু দে রেখে
রাজপথে কিছু শুকিয়েও যায়
কিছুটা শুকোয় বর্ডারে
ইতিহাস কিছু মুছেটুছে দেয়
রাজা বা রানির অর্ডারে
মোজার ভিতরে উপহার জমে
পূজাবেদীমূলে ভক্ত
যিশুর জন‍্যে কেঁদে ওঠে শিশু
বলে, ও মা! এ যে রক্ত!

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Saturday, December 23, 2017

দুলাল বিশ্বাস: zরা হটকে

দুলাল বিশ্বাস: zরা হটকে
মুক্তিপ্রকাশ রায়

মাঝেমাঝে এক-একজনের অবয়ব ছেয়ে ফ‍্যালে গোটা একটা দিন। সেদিন তার কথাই ভেসে বেড়ায় নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে। দেবলের বাবার কথা আজ কিছুতেই মন থেকে সরানো যাচ্ছে না। আজ তাঁর শ্রাদ্ধ।
     দেবলের বাবা দুলাল বিশ্বাস। শেষদিকটায় ভুগছিলেন খুব। ডায়ালিসিস করা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। তবে দেবলদের লড়াইটা হঠাৎ এইভাবে শেষ হয়ে যাবে, তা ভাবেনি কেউ। দুর্বল শরীরে নিজে সোফা থেকে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন কাকু। মাথায় আঘাত ... তাতেই।
     চিরকাল আমার অদ্ভুত মানুষ পছন্দ। যাঁরা "zরা হটকে"। সাধারণ লোকের জীবন, সমারসেট মম যেমন বলেছিলেন --- ট্রামগাড়ির চলন। বাঁধা পথের বাইরে গেলে তাদের নার্ভাস ডায়েরিয়া হয়। অদ্ভুত মানুষেরা এইজন‍্যই চোখে পড়ে। মনে থেকে যায়। আলাদা হয়ে উঠতে অসম্ভব মনের জোরও থাকতে হয় বোধহয়। কাকুর কথা মনে পড়ছে গাড়িতে যেতে যেতে। ব‍্যাবসায় রোজগার যেমন করেছেন, খরচও করেছেন হাত খুলে। খরচটা মূলত খাওয়াদাওয়ায়। গর্ব করে বলতেন, বুzলা মুক্তি, দুলাল বিশ্বাস যদি না খেয়ে টাকা zমাইত, তাইলে সোনার ইট দিয়া বাড়ি বানাইত।
     খুব একটা বাড়িয়ে বলা নয়। প্রথম যেদিন খবর না দিয়ে উটকো অতিথির মতো দেবলের সঙ্গে ওদের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলাম, সেদিন নিতান্ত 'সাধারণ রান্না' বলতে তিনরকম মাছ আর দেশি মুরগির মাংস! তখন হস্টেলের বুভুক্ষু আমরা। বনগাঁ লোকালের গণলাঞ্ছনার গ্লানি চিতলের কাছে নিতান্ত 'পেটি' হয়ে গেল‌।
     কাকু মছলন্দপুরের বাজারে এলে লোকজন আর ভালো মাছ কিনতে পেত না। কেউ হয়তো পাঁচশো টাকার মাছকে দরাদরি করে সাড়ে চারশোয় প্রায় ম‍্যানেজ করে এনেছে, এমন সময় মার্কেটে দুলাল বিশ্বাসের আবির্ভাব। আড়চোখে তাঁকে দেখতে পেয়েই মাছের ওপর গামছা চাপা দিয়ে সরিয়ে ফেলত মাছওয়ালা-- আপনি ছেড়ে দ‍্যান, এ-মাছ বিককিরি হয়ে গেছে।
সে জানে মাছ ভালো হলে দুলাল বিশ্বাস দরাদরি করে না। কাজেই ...
     মাছওয়ালা অবশ‍্য জানত -- দুলাল বিশ্বাস কঠিন জিনিস। বাজার করায় পিএইচডি। আলতুফালতু মাল তাঁকে গছানো অসম্ভব। মাছের পেট টিপে তার ইউএসজি করে ফেলার ক্ষমতা ছিল তাঁর। এছাড়া কোন ঋতুতে কোন মাছ খেতে নেই, বেগুনের টেস্ট কোন সময়ে বাড়ে, ফুলকপি হাইব্রিড কি না -- তা কী দেখে বোঝা সম্ভব, এ-সব 'গুরুত্বপূর্ণ' বিষয়ে দুলাল বিশ্বাসের মতামত খনা-র বচনের মতোই শিরোধার্য।
     একবার লিচু পাঠানো হবে দেবলের পিসিমার বাড়িতে। এক-আধকিলো নয়, এক রিকশ-ভ‍্যান ভরা লিচু। লিচু ছোটো বলে কাকুর না-পসন্দ্। এত ছোটো লিচু কি বোনের বাড়ি পাঠানো যায়? মান যাবে না? ছেলেমেয়েদের বললেন, এগুলো তোরাই খেয়ে ফ‍্যাল।
বাড়ির ছেলেমেয়ে, সঙ্গে কাজের লোকজন, এক রিকশ-ভ‍্যান লিচু সাবড়ে দিলে! পিসিমার বাড়ির জন‍্যে আবার 'বড়ো' লিচুর অর্ডার হল।
     দেবল বোধহয় ওর গোঁয়ার্তুমি কাকুর থেকেই বংশগতির অনিবার্যতায় পেয়েছিল। দেবলই প্রথম আমায় দেখিয়েছিল -- নিজের খারাপ-লাগা কারও মুখের ওপর বলে দেওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে কাকুর একটা গল্প। একবার, সম্ভবত বনগাঁ লোকালেই, এক কমলালেবুওয়ালা কাকুর সঙ্গে তর্ক জুড়েছিল -- লেবু খেয়ে দেখুন, মিষ্টি না হলে জানলা দিয়ে ছুড়ে ফেলে দেবেন। তো, কাকু নিলেন একখানা লেবু, ধীরেসুস্থে খোসা ছাড়ালেন, মুখে দিলেন এককোয়া, তারপর বাকি লেবুটা ছুড়ে ফেলে দিলেন ট্রেনের জানলা দিয়ে।
     কেন জানি না, কাকু খুব ভালোবেসে ফেলেছিলেন আমাকে। যতবার মছলন্দপুরে গেছি, বা পরে কেষ্টপুরে, উনি আমাকে খাওয়াবেন বলে বাজার করতে ব‍্যস্ত হয়ে পড়তেন। আমার ঠাকুমা ছিলেন পূর্ববঙ্গের উদ্বাস্তু। বাঙাল-রক্ত আমার শরীরে যেটুকু আছে, তা সম্ভবত জিব আর পাকস্থলীতেই। ফলে বাঙাল রান্নার প্রতি আমার বিশেষ পক্ষপাত। আর কাকিমা, অর্থাৎ দেবলের মা, বাঙাল পদাবলির ভানুসিংহী। তাই দেবলের বাড়ি গেলেই আমার নোলা সকসক করত। মুক্তির জন‍্য 'কসুর লতি' জোগাড় না করতে পারলে কাকু ভাবতেন আতিথেয়তায় নিতান্ত ত্রুটি রয়ে গেল।
     একবার একটা পারিবারিক অনুষ্ঠান থেকে ফেরার সময় গাড়িতে উঠে পড়েছি; কাকু অন‍্যান‍্য অতিথিদের নিয়ে ব‍্যস্ত দেখে তাঁকে আর বিরক্ত না করে, কাকিমা আর দেবলের থেকে বিদায় নিয়ে এসেছি; হঠাৎ হন্তদন্ত হয়ে কাকু এসে হাত রাখলেন আমার জানলায় -- চলে যাচ্ছ? মুক্তি, তুমি আমায় একবার বলে গেলা না?
ভেজা গলায় কথাটা যেভাবে বললেন কাকু, তার তীব্রতার কোনও তুলনা হয় না। লজ্জায় আমি তখন প্রায় সিটের নীচে ঢুকে পড়তে চাইছি, নেহাত ভুঁড়ির জন‍্যে পেরে উঠছি না।
     কাকুর চলে যাওয়ার খবর হঠাৎ পেয়ে আমারও যে একটু অভিমান হয়নি তা নয়। কোমায় চলে গেছেন শুনে দেখতে গিয়েছিলুম। সে-দেখা দুঃস্বপ্নের মতো। কাকু চোখ মেলতে পারেননি।

একবার বলে গেলেন না, কাকু?

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, December 19, 2017

বিপথগামী

বিপথগামী
মুক্তিপ্রকাশ রায়

যারা খোঁজে তারা পায়, আমাদের হারানো স্বভাব
সংসার ডুবে গেলে, কবিতার মুঠিমাত্র লাভ
পথিক, তুমি কি পথ হারিয়েছ? ডেকে বলে কারা
আলেয়ার মতো শব্দ বিপথের দেখায় ইশারা
মহাকাল জানে, তাই আমরাও মেনেছি নীরবে
ব‍্যাধের তিরের ফলা একদিন মহাকাব‍্য হবে
হিসেবে চলতে বল, তবু রয়ে যায় ভুলচুক
এভাবেই কবিদের ঔদ্ধত‍্য বজায় থাকুক

#মুক্তিপ্রকাশরায়

Tuesday, December 5, 2017

আত্মরক্ষা

আত্মরক্ষা
মুক্তিপ্রকাশ রায়

দোষীর বিচারে যাব, সাজাও আমাকে
বিবেকের মতো, যেন সাক্ষাৎ শমন
অপরাধী দুঃস্বপ্নে ভাই বলে ডাকে
                                 
খড়্গাঘাতে লেখা হবে সন্দেহাতীত অস্বীকার

ভয় হয়, তাই এই ভয় দেখাবার আয়োজন
নিজেকে রশিতে বাঁধি সভ‍্যতার দৃঢ় মাস্তুলে
সে তত নিষ্পাপ যার হাতে যত নিষ্ঠুর বিচার
গলানো মোমের মতো কর্ণকুহরে ঢালি
জনতার অবোধ গর্জন

প্রিয় , আর দেরি নয়, তর্জনী উঠেছে দিকেদিকে
আমার দায়ের নীচে রাখো তুমি ছাগশিশুটিকে