জাস্ট স্বপ্ন
মুক্তিপ্রকাশ রায়
মা-কে স্বপ্নে দেখলাম কাল।
যদিও তখনও হাসপাতালে, তবুও জানা গেল মায়ের অসুখ সেরে যাচ্ছে। আর কয়েকদিন হাসপাতালে থাকলেই এক্কেবারে সেরে যাবে। সৌম্য চেহারার এক ডাক্তারবাবু বললেন, শুধু কমলালেবুটা খাবেন না কিছুদিন, তাহলেই ...
এত সহজ? শুধু কমলালেবু না খেলেই হবে? এভাবেই সেরে যাবে ক্যানসার? থার্ড স্টেজ বলেছিলেন যে! কে যেন আবার বলেছিলেন -- মেটাস্ট্যাসিস হয়ে গেছে! সেই অনামুখো ডাক্তারের টিকিটিও ধারেকাছে দেখা গেল না।
তবে, ব্রেস্ট ক্যানসারের সঙ্গে কমলালেবুর সম্পর্ক কী তা আমিও ঠিক বুঝলাম না। তবে তাতে মায়ের তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মা তো আম ভালোবাসে। বরং আমার কিছুটা কমলালেবুর প্রতি হ্যাংলামো আছে। লোকাল ট্রেনে কমলালেবু কিনে, একেকটা কোয়া মুখে ফেলে চুষতে চুষতে, আমি বহুবার যাত্রাপথের একাকিত্ব সহনীয় করে তুলেছি।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিল মা। অসুখ-অসুখ ভাবটা মুখ থেকে উধাও হয়েছে একদম। লম্বা চুল একমাথা। কেমো নেওয়ার পর আবার যখন চুল বেরিয়েছিল, মাকে কেমন যেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের মতো দেখাত। এখন আবার লম্বা চুলে সেই আগের মা। তবে মা দেখলাম কাঁদছে।
-কাঁদছ কেন মা? আমি জিজ্ঞেস করলাম -- সব তো ঠিক হয়ে গেল। আর চিন্তা কী? বাড়ি চলে যাব তো এবার। ওই কমলালেবুটুকু না খেলেই ...
মা বলল, কী কপাল দেখ অতটুকু মেয়ের!
পাশের বেডে একটা বাচ্চা মেয়ে শুয়ে ছিল। বছর পাঁচেক বয়স। কেমোথেরাপি মুছে নিয়েছে মাথার চুল। তার নাকি গলায় ক্যানসার। কিচ্ছু খেতে পারে না। নেতিয়ে পড়ে আছে বিছানার এক কোণে।
-আমি সেরে না উঠে যদি ওই মেয়েটা ভালো হয়ে যেত!-- স্থির দৃষ্টিতে মা তাকিয়ে ছিল মেয়েটার দিকে।
-তোমার যত অলক্ষুনে কথা! --এই বলে মায়ের মুখ চেপে ধরলাম আমি। আর তখনই ...
তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল।
বাড়ির পাশের মাঠে স্পোর্টস। প্রাইমারি স্কুলের বিচ্ছুগুলো জড়ো হয়ে গেছে সকাল থেকেই। মাইকে শুরু হয়েছে হাঁকডাক। একটা ছুটির দিনে মানুষ যে শান্তি করে একটু বেলা অবধি ঘুমোবে, তার জো আছে?
চায়ের কাপ হাতে দাঁড়ালাম গিয়ে বারান্দায়। সামনের মাঠে রঙের ছড়াছড়ি। টিফিন আর চেস্ট-নাম্বার বিলি হচ্ছে এখন। বিশেষ করে নজর গেল একটা বাচ্চা মেয়ের দিকে।
একমাথা কোঁকড়া কালো চুল।
গোটা মাঠ জুড়ে ছোটাছুটি করছে শীতের রোদ্দুরে।
তার হাতের মুঠোয় যেন গোটা একটা পৃথিবী।
একটা কমলালেবু।
#মুক্তিপ্রকাশরায়
মুক্তিপ্রকাশ রায়
মা-কে স্বপ্নে দেখলাম কাল।
যদিও তখনও হাসপাতালে, তবুও জানা গেল মায়ের অসুখ সেরে যাচ্ছে। আর কয়েকদিন হাসপাতালে থাকলেই এক্কেবারে সেরে যাবে। সৌম্য চেহারার এক ডাক্তারবাবু বললেন, শুধু কমলালেবুটা খাবেন না কিছুদিন, তাহলেই ...
এত সহজ? শুধু কমলালেবু না খেলেই হবে? এভাবেই সেরে যাবে ক্যানসার? থার্ড স্টেজ বলেছিলেন যে! কে যেন আবার বলেছিলেন -- মেটাস্ট্যাসিস হয়ে গেছে! সেই অনামুখো ডাক্তারের টিকিটিও ধারেকাছে দেখা গেল না।
তবে, ব্রেস্ট ক্যানসারের সঙ্গে কমলালেবুর সম্পর্ক কী তা আমিও ঠিক বুঝলাম না। তবে তাতে মায়ের তেমন অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। মা তো আম ভালোবাসে। বরং আমার কিছুটা কমলালেবুর প্রতি হ্যাংলামো আছে। লোকাল ট্রেনে কমলালেবু কিনে, একেকটা কোয়া মুখে ফেলে চুষতে চুষতে, আমি বহুবার যাত্রাপথের একাকিত্ব সহনীয় করে তুলেছি।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিল মা। অসুখ-অসুখ ভাবটা মুখ থেকে উধাও হয়েছে একদম। লম্বা চুল একমাথা। কেমো নেওয়ার পর আবার যখন চুল বেরিয়েছিল, মাকে কেমন যেন গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের মতো দেখাত। এখন আবার লম্বা চুলে সেই আগের মা। তবে মা দেখলাম কাঁদছে।
-কাঁদছ কেন মা? আমি জিজ্ঞেস করলাম -- সব তো ঠিক হয়ে গেল। আর চিন্তা কী? বাড়ি চলে যাব তো এবার। ওই কমলালেবুটুকু না খেলেই ...
মা বলল, কী কপাল দেখ অতটুকু মেয়ের!
পাশের বেডে একটা বাচ্চা মেয়ে শুয়ে ছিল। বছর পাঁচেক বয়স। কেমোথেরাপি মুছে নিয়েছে মাথার চুল। তার নাকি গলায় ক্যানসার। কিচ্ছু খেতে পারে না। নেতিয়ে পড়ে আছে বিছানার এক কোণে।
-আমি সেরে না উঠে যদি ওই মেয়েটা ভালো হয়ে যেত!-- স্থির দৃষ্টিতে মা তাকিয়ে ছিল মেয়েটার দিকে।
-তোমার যত অলক্ষুনে কথা! --এই বলে মায়ের মুখ চেপে ধরলাম আমি। আর তখনই ...
তখনই ঘুমটা ভেঙে গেল।
বাড়ির পাশের মাঠে স্পোর্টস। প্রাইমারি স্কুলের বিচ্ছুগুলো জড়ো হয়ে গেছে সকাল থেকেই। মাইকে শুরু হয়েছে হাঁকডাক। একটা ছুটির দিনে মানুষ যে শান্তি করে একটু বেলা অবধি ঘুমোবে, তার জো আছে?
চায়ের কাপ হাতে দাঁড়ালাম গিয়ে বারান্দায়। সামনের মাঠে রঙের ছড়াছড়ি। টিফিন আর চেস্ট-নাম্বার বিলি হচ্ছে এখন। বিশেষ করে নজর গেল একটা বাচ্চা মেয়ের দিকে।
একমাথা কোঁকড়া কালো চুল।
গোটা মাঠ জুড়ে ছোটাছুটি করছে শীতের রোদ্দুরে।
তার হাতের মুঠোয় যেন গোটা একটা পৃথিবী।
একটা কমলালেবু।
#মুক্তিপ্রকাশরায়